জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭২তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন ।
শনিবার বেলা ২টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে আবুধাবির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার সকালে তিনি ইত্তিহাদ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে আবুধাবি ছেড়ে যাবেন। রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছালে সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। খবর বাসসের।
জানা গেছে, সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কের হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে অবস্থান করবেন। তিনি ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন এবং একই দিন তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করবেন।
১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত জাতিসংঘ সংস্কার বিষয়ক এক উচ্চ পর্যাযের বৈঠকে যোগ দেবেন। পরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘প্রিভেনশন অব সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন অ্যান্ড অ্যাবিউজ’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে যোগ দেবেন। একইদিন বিকেলে কনভেনি কনফারেন্স সেন্টারে ‘গ্লোবাল ডিল ফর ডিসেন্ট ওয়ার্ক অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ’ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক ফলোআপ বৈঠকের আগে তার ভুটানি সমকক্ষ সেরিং টবগের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে।
১৯ সেপ্টেম্বর অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেবেন। এর আগে তিনি ‘উইমেন্স ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট ফর লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড’-এর ওপর জাতিসংঘ মহাসচিবের উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলের সঙ্গে এক গোল টেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন। একই দিন বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ওআইসি কনটাক্ট গ্রুপের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেবেন।
পরে মৌরিসাসের প্রধানমন্ত্রী প্রভিন্দ কুমার জুগনাউথের সঙ্গে তার দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ও কমনওয়েলথের বর্তমান চেয়ার-ইন অফিস মাল্টার প্রধানমন্ত্রী ড. জোসেফ মাসকেট আয়োজিত কমনওয়েলথ রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এছাড়াও সন্ধ্যায় ম্যাডিসন অ্যাভিনিউয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত শুভেচ্ছা সংবর্ধনায় অংশ নেবেন। পরে তিনি নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট স্কয়ারে প্রবাসী বাংলাদেশদের আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইউএনএইচকিউ-তে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের ওপর চুক্তি সই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরে ইউএনএইচকিউ-তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট মিজ কেরস্তি কালজুলাইদ-এর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনা ‘এসডিজি ইমপ্লিমেন্টেশন, ফাইন্যান্সিং অ্যান্ড মনিটরিং: শেয়ারিং ইনোভেশনস থ্রু সাউথ-সাউথ এবং ট্রাইয়াঙ্গুলার কো-অপারেশন’ শীষর্ক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ইউএনএইচকিউ- তে সাউথ সাউথ কো-অপারেশন এর ওপর ইউএনডিপি এবং ইউএন অফিসের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে। পরে, প্রধানমন্ত্রী ‘ক্রিয়েটিং এ পলিসি ভিশন ফর এসডিজি ফাইন্যান্স: ফ্যাসিলিট্যাটিং প্রাইভেট সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট ইন দ্য এসডিজিস শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ইউএনএইচকিউ- তে ইউএনডিপি’র সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ ও কানাডা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে।
এদিন প্রধানমন্ত্রী বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত একটি গোলটেবিল মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেবেন। পরে, শেখ হাসিনা উন্নয়নের জন্য সার্বিক অর্থায়ন বিষয়ক জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত নেদারল্যান্ডের রানী ম্যাক্সিমার সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী ইস্যুতে ইথিওপিয়া প্রতিনিধিদল আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের উন্মুক্ত আলোচনায় যোগ দেবেন। এছাড়া শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস স্কওয়াব এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সদানন্দ ধুমির সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্জিনিয়ার আইবিএম এর প্রেসিডেন্ট মেরি রোমেটি সাক্ষাৎ করবেন। এরপর কসোবোর প্রেসিডেন্ট হাসগিম থাচির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পরে প্রধানমন্ত্রী ইউএনএইচকিউ-এ পানি বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলের চতুর্থ বৈঠকে যোগ দেবেন। পরে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেপালি সমকক্ষ শের বাহাদুর দেউবার মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে তার এই জাতিসংঘ সফরের ওপর সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন। ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে সড়কপথে ভার্জিনিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। ভার্জিনিয়ায় এক সপ্তাহ অবস্থানের পর তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন এবং ২ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরবেন।