মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদণ্ডিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মামলার খসড়া ফাঁসের মামলায় রায় আজ। গত ৪ আগস্ট যুক্তিতর্ক শেষে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এসএম শামসুল আলম আজ রায়ের জন্য দিন ধার্য্য করেন।
ট্রাইব্যুনাল গত ১৫ ফ্রেবায়ারি আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছিলেন। আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে পরবতীতে ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় ২১ জন সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করেন। ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম আইনজীবী এবিএম খায়রুল ইসলাম লিটন এ বিষয় নিশ্চত করেন।
আসামি সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদী হাসান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
অপর তিন আসামি সাকার ম্যানেজার একেএম মাহবুবুল হাসান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অফিস সহকারী (সাঁটলিপিকার) ফারুক হোসেন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নয়ন আলী কারাগারে আটক আছেন।
গত বছরের ২৮ আগস্ট ডিবির পরিদর্শক মো. শাহজাহান আসামি ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে রায়ের আগেই সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তারা ‘রায়ের খসড়া কপি’ সংবাদকর্মীদের দেখান।
রায় ঘোষণার পরদিন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার একেএম নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন। মামলায় ট্রাইব্যুনালের ফারুক ও নয়ন এবং ব্যারস্টার ফখরুলের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদীকে আসামি করা হয়েছিল।
এ ছাড়া ৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান বাদী হয়ে ঢাকার শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেছিলেন।
মামলায় বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী রায়ের দিন রায় ঘোষণার পূর্বেই রায়ের কপি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া ব্যস্ত করেন যে, রায়ের কপি ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা রায় ঘোষণার পূর্বেই পেয়েছে। তারা রায়ের স্পাইরাল বাইন্ডিং কপি মিডিয়াতে প্রদর্শন করেন এবং সেটি নিয়েই তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করেন।
চার্জশিটে বলা হয়, মিডিয়ায় রায় প্রকাশ হলে পরিচ্ছন্নকর্মী নয়ন আলী মেহেদী হাসানের চেম্বারে যায় এবং রায় কিভাবে ফাঁস হলো জানতে চাই। মেহেদী হাসান তাকে জানায় রায়ের কপি তার কাছ থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার নিয়ে গেছে। তারাই অনলাইনে এ রায় ফাঁস করে। মেহেদী নয়ন আলীকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
নয়ন আলীর জবানবন্দির ভিত্তিতেই ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ম্যানেজার মাহবুবুল আহসানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
চার্জশিটে আরো বলা হয়, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দেশ বিদেশে বিচার বিভাগ ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করতেই কৌশলে রায়ের কপি সংগ্রহ করে তা এমএস ওয়ার্ড থেকে পিডিএফ এ রুপান্তর করে www.traibunalleaks.be নামক অনলাইনে প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম।
এদিকে সাকা ছেলে হুমাম কাদের চৌধুরীর ছেলে গত ৪ আগস্ট আদালতে আসার পথে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে তার পরিবার দাবি করলেও ডিবি পুলিশ তা অস্বীকার করেছে। সাকা ছেলে হুমাম কাদের চৌধুরীর এ মামলার আসামি।