ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন ঘিরে সম্মেলনস্থল ও দলীয় কার্যালয়গুলোতে বাড়ছে নেতাকর্মীদের ভিড়, চলছে সাজ সাজ রব। চার বছর পর হতে চলা এ সম্মেলন সামনে রেখে এরই মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসানো হয়েছে ‘অস্থায়ী ক্যাম্প’। প্রতিদিন বিকাল থেকে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা ক্যাম্পে জড়ো হচ্ছেন; নিয়ম করে চলছে সম্মেলন প্রস্তুতির সাজসজ্জা উপ-কমিটির বৈঠক।
ঐতিহাসিক এ উদ্যানেই ২২ ও ২৩ অক্টোবর বসবে সাত দশকের পুরনো এ দলটির সম্মেলন। এবারের সম্মেলনের শ্লোগান ঠিক হয়েছে- ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ জানান, দেশ-বিদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের অভ্যর্থনা এবং সম্মেলনস্থলকে দৃষ্টিনন্দন করতে সব প্রস্তুতি তারা এগিয়ে নিচ্ছেন।
“আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হচ্ছে; সম্মেলন সফল করতে ওখানে অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে।” পাশাপাশি রাজধানীতে আওয়ামী লীগের অন্যন্য অফিসও দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে।
এরই মধ্যে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ও গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে হয়েছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। চলছে অন্যান্য প্রস্তুতিও।
জাতীয় সম্মেলন নিয়ে গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই জাতির জন্য নতুন কিছু বয়ে আনা। আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানেই ঐতিহাসিক অনেক গুরুত্ব বয়ে আনা।”
মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ এর।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। নতুন নাম হয়-‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’; স্বাধীনতার পর যা হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০ এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।
তবে রাজনৈতিক মতভিন্নতার কারণে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।
এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।
এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসনে নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠন। নেতাদের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ।
১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসাবে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন, আন্দোলন শুরু করেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে।
২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবারো সরকার গঠন করে। পাঁচ বছর শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। কারচুপির মাধ্যমে তাদের হারানো হয়েছে বলে সেসময় দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকারে ফেরে। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া এ দলটি ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বশেষ সম্মেলন করে।
সেবার দ্বিতীয়বারের মত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ‘সংস্কারপন্থী’ হিসাবে পরিচিতি পাওয়া তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দলের সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ পড়ে হন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
সারা দেশের ৭০টি সাংগঠনিক জেলা থেকে ছয় হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর এবারের সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের ছয় ধারার ‘খ’ উপ-ধারায় প্রতি ২৫ হাজার জনসংখ্যার জন্য একজন করে কাউন্সিলর থাকার কথা বলা হয়েছে; সে অনুযায়ী এবার ছয় হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর কাউন্সিল অধিবেশনে প্রতিনিধিত্ব করবেন।