Friday, May 2, 2025
Google search engine
Homeনির্বাচিত সংবাদনিবন্ধন ও ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক কি ফিরে পাচ্ছে জামায়াত?

নিবন্ধন ও ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক কি ফিরে পাচ্ছে জামায়াত?

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলা। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের ৮ মাস পার হলেও দলটির প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। 

গত ৫ আগস্টের পর আইনি প্রক্রিয়ায় অন্য দলের শীর্ষনেতারা মুক্ত হলেও এক যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে দলের শীর্ষনেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এই ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল এই আদালতে শুনানির অপেক্ষায়। দুই মামলার ভবিষ্যৎ এখন সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলছেন দলের আইনজীবীরা। 

তারা জানান, যৌক্তিক কারণে বিলম্ব হলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। চলতি সপ্তাহে আলোচিত এই দুটি মামলার শুনানি হতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকার আসন্ন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখন পর্যন্ত ঘোষণা না করলেও ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। পিছিয়ে নেই জামায়াতও। এরই মধ্যে প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থীও চূড়ান্ত করেছে দলটি। অথচ নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি সর্বোচ্চ আদালতে।

এরই মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস কেটে গেছে। রাজনীতির মাঠেও বেশ সরব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি ইস্যু এখনো নিষ্পত্তি না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে। নির্বাচনের আগেই নিবন্ধন ও এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি চায় তারা। এজন্য তাদের সবাই সর্বোচ্চ আদালতের দিকেই তাকিয়ে আছেন।

এদিকে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা আপিল বিভাগে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে দলটির নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা। জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন। 

তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত একটি ‘সার্টিফিকেট আপিল’ করেছে। যা সংবিধান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আওতাভুক্ত হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ শুনানি প্রয়োজন। 

শিশির মনির আরও বলেন, ‘মামলার শুনানি শুরু হওয়ার পর অপর পক্ষের আইনজীবী দেশের বাইরে থাকায় তারা কিছুদিন সময় নেন। পরে শুনানি এগিয়ে এলে মামলায় নিযুক্ত বিচারপতি দুর্ঘটনায় পড়েন। এ কারণে তিনি প্রায় এক মাস আদালতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। এতে দ্বিতীয় ধাপে মামলার শুনানি বিলম্বিত হয়।

জামায়াতের এই আইনজীবী বলেন, আগামী ২০ এপ্রিল আদালত খুলবে। প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার এই মামলার শুনানি হয়। সেই হিসাবে ২২ এপ্রিল এই মামলার শুনানি শুরু হলে দ্রুত তা শেষ হবে বলে আশা করছি। কিন্তু ২৩ থেকে ৩০ তারিখ প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে থাকবেন। এরপর এই দুই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। 

জামায়াতের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক শনিবার বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলাটি শুনানির শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আগামী ২২ এপ্রিল শুনানির জন্য ধার্য আছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল হালিম বলেন, ‘১৯৭৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত জামায়াতের ৫৫ জন নেতা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাদের মধ্যে ৫০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী।’ 

তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন না পাওয়া আমাদের জন্য দুঃখজনক। আশা করি সাংবিধানিক ও আইনানুগ পন্থায় আমরা ন্যায়বিচার পাব।’

জামায়াতের গঠনতন্ত্র কোনোভাবেই অসাংবিধানিক নয় : জামায়াতের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপিল শুনানিতে কিছু আইনি যুক্তি তুলে ধরা হবে। 

তারা বলেন, সংবিধান এবং গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২-এর সঙ্গে জামায়াতের গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক বলে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো, গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী অতীতে সবগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। প্রায় সব জাতীয় সংসদেই জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। জামায়াতের গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনোভাবেই অসাংবিধানিক নয়। কারণ অ্যাসোসিয়েশন করার অধিকার, দল গঠন করার অধিকার, এটা সব ব্যক্তির আছে। আপিল শুনানিতে জামায়াতের দলীয় নির্বাচনি প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে পেতে কয়েকটি আইনি যুক্তি তুলে ধরবেন দলটির আইনজীবীরা। 

তারা বলেন, আপিল বিভাগে শুনানিতে আমরা বলব, প্রতীক বরাদ্দের দায়িত্ব তো সুপ্রিমকোর্টের নয়। প্রতীক বরাদ্দ করেছে নির্বাচন কমিশন। কয়েক যুগ থেকে জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা। জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত দাঁড়িপাল্লাই দলটির প্রতীক। এই প্রতীক এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদি আমাদের আপিল অ্যালাউ হয়, আপিল বিভাগ আপিল অ্যালাউ করেন, তাহলে নিশ্চয়ই প্রতীকসহ অ্যালাউ করবেন।

যেভাবে নিবন্ধন বাতিল হয় : রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পরে দেরি মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ আবেদন মঞ্জুর (রিস্টোর) করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।

এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল : মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করলে শুনানি শেষে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল। যা চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রিভিউ শুনানির জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আজহারুলের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লিভ (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে আদেশ দেন। পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দিতে বলা হয়। আর আপিল শুনানির জন্য আগামী ২২ এপ্রিল তারিখ ধার্য করা হয়। এটিএম আজহারুল ইসলাম কারাগারে আছেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments