ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেন। স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বিভিন্ন বিষয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করেন তিনি।
ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে গণমাধ্যমগুলোর খবরে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়, শপথ নেওয়ার পর ২০০টির বেশি নির্বাহী আদেশের ঘোষণা দিতে পারেন ট্রাম্প।মার্কিন প্রেসিডেন্টদের জন্য দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন বিষয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করা একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া। এসব আদেশের আইনি ক্ষমতা থাকে, তবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বা আদালত চাইলে সেগুলো বাতিল করতে পারে।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পরিমাণ নির্বাহী আদেশ জারি করার পরিকল্পনা করেছিলেন, তা নজিরবিহীন। আর ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই তার অনেকটা তিনি বাস্তবায়নও করেছেন।
শপথ নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন, শুল্ক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসা ও আরও উল্লেখযোগ্য যেসব নির্বাহী আদেশ ঘোষণা করেছেন তা হলো :
জলবায়ু নীতি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পরপরই ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’ থেকে বেরিয়ে আসার নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। মূলত ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে গত এক দশকের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্বন নির্গমনকারী এই দেশটিকে এই জলবায়ু চুক্তির বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। এর আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার আদেশ জারি করেছিলেন। নতুন বায়ু–বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির আদেশ বাতিল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
২০১৫ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তিটি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে বিশ্বর দেশগুলোকে একতাবদ্ধ করেছিল। সে সময় ২০০টির মতো দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনতে ঐক্যমত্য পোষণ করে।
অভিবাসন নীতি
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত আদেশ। এসব বিষয়ে সই করার পর তিনি বলেন, এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিবাসী বিতাড়ন কর্মসূচি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং দক্ষিণ সীমান্ত সুরক্ষায় সামরিক বাহিনীকে সহায়তার নির্দেশ দেন।
তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের আইনের সমালোচনা করে এটিকে ‘হাস্যকর’ বলেছিলেন এবং একদিন এটি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে, শুধু নির্বাহী আদেশ দিয়ে এটি পরিবর্তন করা কঠিন, কারণ মার্কিন সংবিধানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। এরপর তিনি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করেন।এর মধ্যে ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত আদেশও রয়েছে।
ওয়ার্ক ফ্রম হোম সুবিধা বাতিল
সরকারি কর্মীদের বাসায় থেকে দাপ্তরিক কাজ করার (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) সুবিধা বাতিল করে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
মেক্সিকো নীতি
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি তার ‘মেক্সিকোতে থাকুন’ নীতি আবারও পুনর্বহাল করছেন। অর্থাৎ যারা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হিসেবে আসতে চান বা আশ্রয় নিতে চান; প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের মেক্সিকোতে অবস্থান করতে হবে।
মাদক চক্র
ট্রাম্প মেক্সিকান মাদক গ্যাংগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেন এবং বলেন, এসব গ্যাং ধ্বংস করা হবে।
শুল্ক
যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প উৎপাদন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অংশ হিসেবে ট্রাম্প আমদানি পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্কারোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি সব ধরনের আমদানি পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের আশ্বাস দিয়েছেন, এর মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এসব শুল্ক ভোগ্যপণ্যের দাম এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে।
ক্রিপ্টো মজুত
ট্রাম্প সব সময় ক্রিপ্টোকারেন্সির পক্ষে ছিলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিটকয়েনের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অনেকের বিশ্বাস, বিটকয়েনের একটি কেন্দ্রীয় মজুত গড়ে তোলার জন্য ট্রাম্প খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল ও সোনার মতো একটি কৌশলগত মজুত। ট্রাম্পের ভাষ্য, মার্কিনদের উপকারে এটি স্থায়ী জাতীয় সম্পদ হিসেবে কাজে লাগবে।
ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গা
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই নিজের প্রায় ১ হাজার ৫০০ সমর্থককে কারামুক্ত করার জন্য এক নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার পর শত শত মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধ
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় দাবি করেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার প্রথম দিনেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। যুদ্ধ বন্ধে তাঁর ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে যুদ্ধ বন্ধে প্রথম দিনগুলোয় কী পদক্ষেপ নেবেন, এখনো তা স্পষ্ট নয়। শপথ নেওয়ার দিন ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধ বন্ধে চুক্তিতে পৌঁছাতে চান।
ডিইআই
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে স্কুল এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো নারী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সহায়তায় বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে। ‘বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তির (ডিইআই)’ অধীন শ্রেণিবদ্ধ এসব চর্চার প্রতি অনেক সময় রক্ষণশীলেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এগুলো আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হয়েছে। ট্রাম্প এগুলো বিলুপ্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।
টিকটক
টিকটক নিয়ে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। এতে চীনা মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক নিষিদ্ধ করার আইন স্থগিত হলো। ট্রাম্প এর আগে টিকটকের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি তাঁর এ অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় টিকটকে তাঁর ভিডিওগুলো কোটি কোটি বার দেখা হয়েছে।