কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, লালমাই, বরুড়া, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে স্মার্টফোনের নানান গেমইস, অনলাইন জুয়া ও টিকটকে। ফলে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের আসক্তির হার বেড়েছে শতভাগ। অত্র অঞ্চলে সামাজিক ভাবে গড়ে উঠেছে নানাহ অপরাধী কর্মকান্ড। শিক্ষা নিয়ে ওইসব শিক্ষার্থীদের যেন আর কোন চিন্তা নাই।
স্থানীয় শিক্ষকদের একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের গ্রামে গঞ্জে এখন আর শিশু-কিশোরদের তেমন খেলাধুলা করতে দেখা যায় না। চলমান মহামারী করোনায় প্রায় দু’বছর সময় ধরে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, বন্ধ প্রাইভেট কোচিং। এ সুযোগে শিক্ষার্থীরা মেতে উঠেছে স্মার্টফোনের নানান গেমইস, অনলাইন জুয়া ও টিক টকে। ফেইস বুক, ইউটিউব আর নানান গেমইসে তাদের সারাদিন চলে যায়। এর ফলে তাদের শিক্ষা জীবন নিয়ে আতংকিত অভিভাবকগণ।
সূত্রটি আরও জানায়, সকল ধরনের শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে বিভিন্ন গোপন স্থানে স্মার্টফোনের মাধ্যমে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওইসব অবৈধ খেলা খেলছে। ওইসব খেলা খেলতে শিক্ষার্থীরা তাদের স্বজনদের কাছ থেকে নানাহ অজুহাতে মোবাইল কিনে নেয়। ওইসব শিক্ষার্থীরা নানাহ অপরাধের সাথে জড়িয়ে অর্থ সংগ্রহ করে প্রতিনিয়ত এসব গেমইস-জুয়া খেলছে। আবার অনেকাংশে গভীর রাত পর্যন্ত গেইমস ও অনলাইন জুয়াসহ নানাহ অ্যাপ চালিয়ে শিক্ষার্থীরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। ফলে এলাকার কোথাও কোথাও কিশোর অপরাধ বাড়ছে।
জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলাগুলোর একাধিক অভিভাবক জানায়, আমাদের সন্তানেরা স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতো। মহামারী করোনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে পড়লে তাদের মা-বাবাকে নানাহ অজুহাতে বাধ্য করে স্মার্টফোন কিনে নেয়। সেহেতু লেখাপড়ার কোন বালাই নাই। তাই এখন সারাক্ষন মোবাইলে কি যেন খেলে। মাঝে মাঝে আত্মচিৎকার, চেচামেচি আর গালাগালি কি এমন বিষয় দেখে এমন করছে তারা আমরা তা বুঝি না। আবার মোবাইলের ওইসব চিত্র দেখে স্বজনদের কেহ বাঁধা দিলে তারা তাদের দিকে তেড়ে আসেন। ফলে জেলা দক্ষিনাঞ্চলের সবক’টি উপজেলায় সামাজিক ভাবে দেখা দিয়েছে কিশোর গ্যাংএর অপতৎপরতা। গ্রামের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যাক্তিরা আগের মতো এসব নিয়ে এখন আর কোন কথা বলে না।
এলাকার কয়েকজন কিশোর শিক্ষার্থী জানায়, তারা স্মার্টফোনে নানাহ সাংকেতিক কোর্ড ব্যাবহার করে বিভিন্ন ভাষায় এসব গেমইস খেলছে। সন্ধা থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত তারা গোপন জায়গায় এসব খেলছে। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে গেমইস, জুয়া ও টিক টক না খেলতে পারলে বোধ হয় মারাই যাবো। কিশোরদের পাশাপাশি শিশু-কিশোরীরাও প্রতিযোগিতা করে এসব অবৈধ খেলা খেলছে। এক একজন স্মার্টফোন মালিক এসব খেলা একাধিক ফেইসবুক আইডি খুলে ওইসব খেলা খেলছেন তারা।
স্থানীয় জনৈক চিকিৎসক জানায়, ওইসব শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোনে এসব খেলাকে সেলফোন অ্যাডিকশন ও নন ড্রাগ অ্যাডিকশন বলে দাবী করেছেন। এ খেলা মাদক নয় তবে তাতে আশক্তি কিংবা নেশা আছে। এ খেলা ঘিরে মানসিক ভারসাম্যহারা প্রচুর রোগীকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। এটি একটি সামাজিক অবক্ষয়। বর্তমানে মহামারী করোনার চাইতেও এই স্মার্টফোনে গেমইস-জুয়া এ অঞ্চলে প্রকট আকার ধারণ করেছে। সকল মহল এ বিষয়টি নিয়ে এখনি ভাবা উচিৎ। তবে অভিভাবক কিংবা স্বজনদেরও এ বিষয়ে দায়িত্ব আছে। সমাজের সকল শ্রেণির পেশার মানুষের এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচিত বলে আমরা মনে করি।