দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান চিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমানে শিক্ষায় উন্মাদনা চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে ‘গ্রন্থ আড্ডা’র অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতোগুলো ছেলে-মেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, তার মধ্যে মনে হয় সাড়ে পাঁচ হাজার ভর্তির সুযোগ পেয়েছে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে… বাকিরা কী করবে?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, হাইস্কুলে লটারি করে ভর্তি হয়। আমি একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল সেখানে লটারি করে ঠাকুরগাঁওয়ের ছেলেরা পরীক্ষা দিয়েছে… ক্লাশ থ্রিতে যে ছেলেটা ভর্তি হবে তাকে যেতে হচ্ছে গাইবান্ধা স্কুলে।’
‘এটা কোন ব্যবস্থা? কী লাভ এটাতে? কী তৈরি হচ্ছে- আমি কিছু বুঝতে পারি না। এই যে একটা আমি বলব যে, উন্মাদনা চলছে শিক্ষার ক্ষেত্রে… এটার ব্যাপারে কেউ দৃষ্টিও দিচ্ছে না, কথাও বলছে না, বিষয়গুলো পরিবর্তন করার জন্য কোনো চেষ্টা করা হচ্ছে না’- যোগ করেন তিনি।
‘শিক্ষাক্ষেত্রে হযবরল অবস্থা’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের অনেক সমস্যা তার মধ্যে লেখাপড়াটা একেবারে শেষ হয়ে গেছে… শিক্ষা এবং শিক্ষাব্যবস্থা এটা একদম শেষ…এটার মধ্যে কিছু অবশিষ্ট আছে বলে আমার মনে হয় না। প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করেন একেবারে ইউনির্ভাসিটি… সব জায়গায় দেখবেন যে এত নিচে চলে গেছে তার মান- তা বলে বুঝানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘ক্যাডেট কলেজ সেটাতে সরকার অনেক অর্থ ব্যয় করে, এটা তো মোস্ট প্রিভিলাইজড… বাট ওয়াট এভার দ্য প্রাইমারি স্কুলস। একেবারে কুড়িগ্রামের রৌমারি চরের সেই প্রাইমারি স্কুলে সেখানে কী শিক্ষা পাচ্ছে, কী সুবিধা পাচ্ছে- সেটা কিন্তু আমরা একেবারেই জানি না। অসংখ্য স্কুল তৈরি হয়েছে বিভিন্ন এমপিওভুক্ত করে, অনেক কলেজ তৈরি হয়েছে উইথ অনার্স অ্যান্ড মাস্টার্স যেখানে কোনো শিক্ষক নেই সেখানেও অনার্স খুলে বসে আছে।’
সাবেক শিক্ষক ফখরুল বলেন, দিনাজপুর গভর্মেন্ট কলেজে কিছুদিন আগে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল… আমার চাকরি জীবনের শুরুতে দিনাজপুর গভর্মেন্ট কলেজে অধ্যাপনা করেছিলাম, সেখানে একটা ডিপার্টমেন্ট আছে একাউট্যান্সি ডিপার্টমেন্ট যেখান একজন শিক্ষক… অনার্স আছে মাস্টার্স আছে। এখন আপনারা বলুন এই বিভাগগুলোর কিংবা এই কলেজগুলো কি প্রয়োজন আছে? সবাই আর্টস পড়ে বিএ-আর্টস, কমার্স খুব কম ছাত্র পড়ে, সায়েন্স পড়ে না প্রায়… তাহলে এই যে, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিএ পাশ করাচ্ছেন এদেরকে দিয়ে আপনি কী করাবেন, সমাজে তার প্রয়োজন কী? কোনো প্রয়োজন নাই। যার ফলে সমাজে দেখা যায়, বৃদ্ধ মা তার ছেলেটাকে পড়ালেখার জন্য তার শেষ জমিটুকু বিক্রি করে ছেলেকে ঢাকায় পাঠায়… সেই ছেলে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি নিয়ে দেখা যায় সে কোনো চাকরি পায় না। তাহলে সারা দেশে অসংখ্য শিক্ষিত বেকার এটা বড় সমস্যা, এটা নিয়ে কেউ চিন্তা করছি না।
‘শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার হওয়া দরকার’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন কিন্তু শিক্ষাবিষয়ক কোনো সংস্কার কমিশন হয়নি। যেটা আপনার আগে প্রয়োজন ছিল যেটা আগে দরকার ছিল বলে আমি মনে করি। গোটা সমস্যার মূলে ওই জায়গাটা।
তিনি বলেন, ‘আমার যদি শিক্ষাটা ঠিক না হয়, পরিকল্পনা যদি আমার না থাকে তাহলে আমি কী দিতে পারব বা সমাজে কী পরিবর্তন আনতে পারব, নিজের পরিবারের জন্য কী পরিবর্তন আনতে পারব….। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে হাইস্কুলে লটারি করে ভর্তি হয়।’
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সাবেক ছাত্রনেতা আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, পলিসি গবেষক মাহাদী আমিন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষানুরাগী আফরোজা খানম রীতা, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, সোশ্যাল এক্টিভিস্ট সাইয়িদ আবদুল্লাহ, জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের জহির দিপ্তী, মঞ্জুর এলাহী, কাজী জহিরুল ইসলাম বুলবুল, হাসান আল আরিফ প্রমুখ।