কক্সবাজার থেকে ২০ মাইল দূরের নিরিবিলি সমুদ্রসৈকত প্যাঁচার দ্বীপ। এই দ্বীপের পরিবেশবান্ধব বিচ রিসোর্ট মারমেইড শুরুহয়েছে তিনদিনের ‘বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল’। ২৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই উৎসব চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। গতকাল (২৯ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় বালুচরে শুরু হয় সানসেট ও মুন ইটিং পার্টির আয়োজন। যেখানে তৈরি হয়ডিম্বাকৃতির মঞ্চ। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিদেশি শিল্পীদের চলে পরিবেশনা। উল্লাস মাতেন চার শতাধিক দেশি–বিদেশি পর্যটকেরা।উৎসবের জন্য মারমেইড বিচ রিসোর্টের আঙিনায় সাজানো হয় পৃথক ছয়টি মঞ্চ। রাত দুইটা পর্যন্ত পৃথক মঞ্চে চলে ভিন্নভিন্ন পরিবেশনা। একদিকে চলছে ডিজে, অন্যদিকে ম্রো নৃত্য, রাখাইন নৃত্য এবং বাউল মিউজিক। এছাড়া কয়েকটি স্টলেনানা ধরনের মুখরোচক খাবারের পরিবেশনা।
তিনদিন একই ধরণের পরিবেশনার সাথে আজ প্রদর্শিত হবে এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব বুসানের সেরা পুরস্কারজয়ীসিনেমা ‘বলী: দ্য রেসলার’।
উৎসবে অংশ নিয়েছেন জাপান, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্রমণে আসা ৪৫জনের বেশি পর্যটক। সঙ্গে রয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিপুলসংখ্যাক তরুণ–তরুণী।
বার্নিং ম্যান উৎসব সম্পর্কে জানা আছে ভিয়েতনাম থেকে আসা লেম দাউয়ের। জীবনে প্রথমবার ভ্রমণে এসেছেন বাংলাদেশ। বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের কথা শুনে তিনি ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন মারমেইডে। বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল বেশউপভোগ করছেন তিনি। নেচে–গেয়ে বালুচরে দাঁড়িয়ে বঙ্গোপসাগরে সূর্যাস্তের দৃশ্য দারুণ উপভোগ্য লেগেছে তার কাছে।
আর ২০১৭ সালে মিস বাংলাদেশ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় শিরোপাধারী জেসিয়া ইসলাম উৎসব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনিবলেন, মারমেইডের এই ফেস্টিভ্যাল মনে রাখার মতো। মেরিন ড্রাইভের এক পাশে পাহাড়ের সারি, অন্য পাশে বিশ্বের দীর্ঘতমসমুদ্রসৈকত। এর মধ্যে সাগরতীরে বসে আন্তর্জাতিক মানের একটি ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠান উপভোগ করা সৌভাগ্যেরব্যাপার। পর্যটনশিল্পের বিকাশে এ রকম উৎসব আরও হওয়া উচিত।
সূর্যাস্তের পর মারমেইডের ৩০০ ফুট লম্বা সুইমিংপুলের পাশের মাঠে তৈরি কাঁকড়াসদৃশ মঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক উৎসব।রাত আটটা পর্যন্ত সেখানে তিন পার্বত্য জেলা—বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে আসা ম্রো, মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা, পাংখোয়া তরুণীরা ছাতানৃত্য, বোতলনৃত্য, জুমনৃত্য, বাঁশনৃত্য পরিবেশন করেন। কক্সবাজারের রাখাইন তরুণীরাপরিবেশন করেন থালানৃত্য।
সপরিবার উৎসব উপভোগ করেন কক্সবাজার–৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যবিষয়কসম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল। তিনি বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন বিকাশে মারমেইড বড় ভূমিকা রাখছে। বিদেশি পর্যটকটানতে মারমেইডের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেরও এ ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করা উচিত।
বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যালের আয়োজক মারমেইড ইকোট্যুরিজম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরীবলেন, আজকের উৎসবে ১১টি দেশের অন্তত ১১০ জন বিদেশি পর্যটকসহ অন্তত ৪০০ জন অংশ নিয়েছেন। সমুদ্রতীরেনিরিবিলি পরিবেশে আনন্দ–উল্লাস করতে পেরে সবাই খুশি। কক্সবাজারের পর্যটনকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এইআয়োজন। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের এই উৎসব চলবে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক রক সিটির বার্নিং ম্যান প্রজেক্টের আদলেমারমেইড বিচ রিসোর্টের এই আয়োজন সাজানো হয়েছে।
আনিসুল হক চৌধুরী আরও বলেন, নাচগানের পাশাপাশি ফায়ার শোসহ নানা অ্যাকটিভিটি দর্শকদের মাতিয়ে তুলছে।রোমাঞ্চকর নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরবেন অংশগ্রহণকারীরা। শিল্পকর্ম, স্থাপনা এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মধ্য দিয়েওনতুন এক অভিজ্ঞতা উপভোগ করছেন সবাই। উৎসবের কিউরেটর হিসেবে যুক্ত রয়েছেন খ্যাতিমান জাপানি ফেস্টিভ্যালআর্কিটেক্ট এবং লাইটিং ডিজাইনার জিরো এন্দো।
উৎসবের আরেক আয়োজক সামিহা আলম চৌধুরী বৃষ্টি বলেন, উৎসবে ১১টি দেশের অন্তত ১১০ জন বিদেশি পর্যটকসহঅন্তত ৪০০ জন অংশ নিয়েছেন। সমুদ্রতীরে নিরিবিলি পরিবেশে আনন্দ–উল্লাস করতে পেরে সবাই খুশি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প ও সংস্কৃতি উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বার্নিং ম্যান’ উৎসব যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদার ব্ল্যাক রক সিটিরমরুভূমিতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পী, উদ্যোক্তা ও দর্শকেরা একত্র হন। সৃজনশীলতা, মুক্ত পরিবেশ এবং স্বাধীনতা—এগুলোই হচ্ছে উৎসবের মূলমন্ত্র। বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল সেই একই প্রেরণায় আয়োজিতহচ্ছে।