Saturday, February 22, 2025
Google search engine
Homeজাতীয়একুশের দিনে মানুষের ঢল

একুশের দিনে মানুষের ঢল

মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার বইমেলা সকাল ৮টায় শুরু হয় । রাত ৯টা পর্যন্ত চলে। এদিন যারা শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই দিনের নানা সময়ে মেলায় এসেছেন।

সকালের দিকে মেলায় সামান্য ভিড় ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যা নামার আগেই তা জনারণ্যে পরিণত হয়। একসময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভরে যায় কানায় কানায়।

অনেকে পরিবার নিয়ে সারা দিন কাটিয়েছেন মেলা প্রাঙ্গণেই। অনেকে এসেছিলেন বন্ধু ও প্রিয়জনকে নিয়ে। বিকালের পর মেলার আশপাশ শাহবাগ মোড় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পর্যন্ত যানজটে স্থবির ছিল পুরো এলাকা।

এদিন মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলে বিক্রয়কর্মীদের দম ফেলার ফুরসতও নেই। ছোট-বড় সব প্রকাশনীতে ছিল পাঠক-ক্রেতাদের ভিড়। হাতে হাতে ছিল নতুন বই। তবে মানুষের সমাগমের তুলনায় বিক্রি কম বলেও জানালেন কেউ কেউ। এদিনের বেচাকেনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। ক্রেতাদের হাতে হাতে ছিল ব্যাগভর্তি বই। এদিন প্রায় সব ধরনের স্টলেই ছিল আশানুরূপ বিক্রি।

তরুণ-তরুণীর গায়ে বর্ণমালাখচিত পোশাক জানান দিচ্ছিল বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার কথা। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এদিন বইমেলায় ছুটে আসেন। ছিল শিশুদের কোলাহল। এদিন মেলার দ্বার খুলে যায় সকাল ৮টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। পাঠকদের প্রিয় সব লেখকই এদিন মেলায় এসেছিলেন। বিভিন্ন স্টলে নিজেদের ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন দেশের নামকরা লেখকরা।

ধানমন্ডি থেকে আসা সাদিয়া বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারি অন্যরকম একটা ভালোলাগার দিন। সকালেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বইমেলায় এসেছি। নতুন-পুরোনো বেশকিছু বই কিনেছি।

পুরান ঢাকা থেকে আসা নুসরাত জাহান বলেন, মায়ের ভাষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উচ্চশিক্ষায় আর অফিস-আদালতে বাংলার চর্চা আরও বাড়াতে হবে।

শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ২১তম দিন ছিল। এদিন নতুন বই এসেছে ৩০৭টি। সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে দেড় শতাধিক কবি কবিতা আবৃত্তি করেন। সভাপতিত্ব করেন কবি হাসান হাফিজ। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৫। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। ‘ভাষার লড়াই, গণ-অভ্যুত্থান ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, একুশের চেতনা আমাদের মাঝে এক প্রাত্যহিক বর্তমানময়তা হয়ে সতেজ রূপে বহমান আছে। একুশ অতীত নয়, এটি প্রকৃতপক্ষেই বর্তমান। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়, এর পরবর্তী ন্যায্যতা ও পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট-এই তিন ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। তাই সংগত কারণেই একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মানুষকে অন্তরঙ্গতায় এবং আবেগময়তায় সিক্ত করে।

প্রাবন্ধিক বলেন, ১৯৪৮ সালে শুরু হয়ে মাতৃভাষার অধিকার এবং পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক আন্দোলন ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেছিল। ভাষা আন্দোলনের প্রেরণাই ছিল পরবর্তী উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন এবং চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি। ন্যায়সংগত, বৈষম্যমুক্ত সমাজের আকাঙ্ক্ষা নিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে নিরন্তর সংগ্রাম করেছি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায়ভিত্তিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা আজ প্রথমেই প্রশ্ন তুলতে পারি মাতৃভাষার অধিকার এবং নির্দিষ্টভাবে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার অবস্থান নিয়ে। প্রকৃতপক্ষে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে বৈষম্যের উৎস নির্মূল করতে হবে।

সত্যিকারভাবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে গেলে পরিবর্তনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও দার্শনিক অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ইতিহাস কেবল অতীতের বিষয়ই নয়। এটি পরিবর্তনের রহস্য উদ্ঘাটনের বিদ্যা। জাতীয় সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে আমাদেরকে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে হবে। এর মাধ্যমেই আমরা একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য অগ্রসর হতে পারব। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি মোহন রায়হান ও কবি আবিদ আজম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি রুম্মানা জান্নাত, কবি নিলয় রফিক ও কবি কাজিম রেজা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শাহিন পারভীন, অধরা সরকার রিয়া, একেএম সাইদ হোসেন, তাহরিমা বতুল রিভা, লায়েকা বশীর, বিটু কুমার শীল, শেখ জেরিন শবনম, সৈয়দা সনজিদা জোহরা বীথিকা, শ্রাবণী পাইক, আরিফা নিশাত, বিভাস রঞ্জন মৈত্র ও প্রেমা দাস।

আজকের অনুষ্ঠান : আজ অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জীবন ও কর্ম : কায়কোবাদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইমরান কামাল। আলোচনায় অংশ নেবেন হাবিব আর রহমান। সভাপতিত্ব করবেন আবু দায়েন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments