গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে রাষ্ট্রের আমূল সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে নানা মহলে। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে, বাংলাদেশে এই প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছিল বিতর্ক।
এমন পটভূমিতে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে। তবে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কারের ব্যাপারে একমত সবপক্ষ। এই ন্যূনতম সংস্কার করার ক্ষেত্রেও সময় দরকার। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন কতটুকু প্রস্তুত? তারা প্রস্তুতির জন্য সময়ই বা পাচ্ছে কতটা?
যদিও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের আইনকে সামনে রেখেই তারা নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সেরে রাখছেন। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজে এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিয়ূর রহমান জানান, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আগামী নির্বাচন আয়োজন করতে অনেক প্রস্তুতির দরকার। নতুন নির্বাচন কমিশনের পরামর্শে এখনই ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করার কাজগুলো এগিয়ে রেখেছি।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখে পড়ে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা।
যে কারণে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটি নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিতর্কমুক্ত রাখতে অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে সরকারের কাছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, আগের আইন ধরে প্রস্তুতি নেওয়ার পর যদি সংস্কারের মাধ্যমে আইন ও বিধান নতুন করে ঢেলে সাজানো হয় তাহলে অনেক কিছুই নতুন করে শুরু করতে হবে।
সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে আগামী নির্বাচন আয়োজন করতে তাদের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে।
এদিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার বিষয়ও ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, যদি ডিসেম্বরকে সামনে রাখি তাহলে আমাদের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ করতে হবে এবং সেইভাবেই আমরা এগোচ্ছি।
কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আগামী নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু করলেও কিছু কিছু বিষয়ে এখনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।
ভোটার তালিকা বড় চ্যালেঞ্জ
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ২০ জানুয়ারি থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে নিবন্ধন কেন্দ্রে এই নতুন ভোটারদের বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ ও চোখের মনি বা আইরিশের প্রতিচ্ছবি) তথ্য সংগ্রহ এবং ছবি তোলার কাজ চলছে দেশজুড়ে।
কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, আগামী নির্বাচনে স্বচ্ছ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা করতে বর্তমানে ভোটার তালিকার কাজটাই গুরুত্বের সঙ্গে করছি। তথ্য সংগ্রহ শেষে এখন ধাপে ধাপে বায়োমেট্রিক ও নিবন্ধন কাজ শেষ করবো আমরা।
তিনি জানান, ২০০৮ সালের পহেলা জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম, ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারাই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার এমন প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ নাগরিক ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন, যারা ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি ভোটারযোগ্য হবেন।
নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে ভোটার তালিকা বিধিতে একটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। না হলে ভোটগ্রহণের তারিখ ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারির পরে করতে হবে।
ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বলেন, নির্বাচন প্রস্তুতির সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ। নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিয়েছে সেই অনুযায়ী আমরা হালনাগাদ কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।
ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট হলে তরুণ ভোটারদের একটা বড় অংশ আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে না, যেটিকে বড় একটি সংকট হিসেবে দেখছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা যদি যৌক্তিক সময় পাই, তখন সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সংশোধনের বিষয়গুলো থাকবে। সেগুলো যদি যথা সময়ে করতে পারি তাহলে আমাদের দিক থেকে কোনো অসুবিধা নাই।
‘এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন নতুন এই সাড়ে ১৮ লাখ ভোটারের বিষয়টি মাথায় রাখবে তারা যেন ভোট দিতে পারে’ । ভোটার তালিকা হালনাগাদে নতুন ভোটারের পাশাপাশি মৃত ভোটারদেরও বাদ দেওয়া হচ্ছে তালিকা থেকে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১৫ লাখেরও বেশি মৃত ভোটারকে বাদ দেওয়া হয়েছে তালিকা থেকে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলছেন, তৃণমূলের অনেক পরিবারেই মৃত ব্যক্তির তথ্য মৃত্যু সনদ না থাকায় তা দিতে পারছেন না।
টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিয়ূর রহমান বলেন, অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে অনলাইন ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদ নাই। যে কারণে মারা গেলেও অনেক সময় এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সংসদীয় আসনের সীমানা জটিলতা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দাবি-আপত্তির ওপর ভিত্তি করে সংসদীয় আসনের সীমানায় নানা পরিবর্তন এনেছিল অতীতের নির্বাচন কমিশনগুলো।
গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ১০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, জাতীয় সংসদের সীমানায় সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আনা হয় ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে।
সে সময় এটিএম শামছুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন শতাধিক আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনেছিল।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা হয়নি। তবে এরই মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪১টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের আবেদন জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।
নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করতে হয়।
নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে কোনো কোনো নির্বাচন কমিশন সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই নিয়মগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় সংসদীয় আসনের সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েই গেছে।
যে কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারে যে কমিশন গঠন করেছিল সেই কমিশন সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নতুন আইনের প্রস্তাব করেছে।
যদিও এখনও সেই সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত না হওয়ায় সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করতে পারছে না কমিশন।
চলতি মাসে সীমানা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে করে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের একজন উপ-সচিব জানিয়েছেন, আইনে সংস্কার না হলেও ভোটার সংখ্যা, জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে কোন কোন আসনে কী কী পরিবর্তন করা প্রয়োজন সেগুলোর প্রাথমিক তালিকা প্রস্তত করে রাখছে নির্বাচন কমিশন।
তিনি জানান, এরই মধ্যে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে জনসংখ্যার তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর উপজেলা ও ইউনিয়নভিত্তিক যে ভোটার সংখ্যা রয়েছে সেটির তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে।
তবে শেষ পর্যন্ত সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী যদি বড় কোনো পরিবর্তন আসে কিংবা আসন সংখ্যা যদি বাড়ানো হয় সেক্ষেত্রে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা বাড়বে কি-না এমন প্রশ্নও ছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে।
জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সংস্কারের যে প্রস্তাবনাগুলো আছে সেগুলো কতটুকু আমাদের অ্যাড্রেস করতে হবে সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। তবে আমরা বিভিন্নভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণা হলে সীমানা জটিলতা নিয়ে আরও বেশি সংখ্যক আবেদন ইসিতে জমা পড়তে পারে।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন কবে?
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত হতে হয়।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিধান চালু করে এটিএম শামছুল হুদার নির্বাচন কমিশন।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দল নিবন্ধনে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করলেও ২০২৩ সালের অক্টোবরে নতুন দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয় ইসি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আদালতের নির্দেশে নতুন করে আরও পাঁচটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা রয়েছে ৪৯টি।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছে।
সেক্ষেত্রে এই নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে গণবিজ্ঞপ্তি জারির দলগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই, মাঠ পর্যায়ের তথ্য বাছাইসহ পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত ছয় মাস প্রয়োজন হয় বলে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কিন্তু এ নিয়ে এখনও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আইন ও বিধিতে বেশ কিছু সংস্কারের সুপারিশ করেছে। সেসব সংস্কার প্রস্তাব এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় নতুন দল নিবন্ধনে গণবিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়টিও আটকে আছে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচনের তারিখ হিসেবে আমরা যদি ডিসেম্বরকে সামনে রাখি, তাহলে আমাদের সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরের মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ করতে হবে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই এগোচ্ছি। আশা করি দল নিবন্ধন নিয়েও তেমন কোনো সংকট হবে না।’
আইন সংস্কার ও নির্বাচনের তফসিল
বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা।
যে কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন অন্তত ১৬টি ক্ষেত্রে দেড়শোটির বেশি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে সরকারের কাছে।
এরমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
যদিও এসব প্রস্তাব নিয়ে এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো আলোচনা শুরু হয়নি।
সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য তৈরিতে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এ বিষয়ে কাজ শেষ করা হবে বলেও ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সেক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য খুব বেশি সময় পাবে না নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বর মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হলে অগাস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইন সংস্কার, ভোটার তালিকা প্রস্তুত, নতুন দলের নিবন্ধন, সীমানা পুননির্ধারণ, পর্যবেক্ষক নীতিমালা প্রণয়ন, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগসহ বেশ কিছু কাজ চূড়ান্ত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হয় জাতীয় সংসদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ভোট করতে হলে তফসিল ঘোষণা করতে হবে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে।
তিনি জানান, সংস্কারের পর আইনে কী ধরনের পরিবর্তন হবে, সেটি নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই নির্বাচন কমিশনের। যে কারণে নির্বাচনের কোনো কাজই চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না ইসির পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে, এরই মধ্যে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করেছে।
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা উচিত।
এমন অবস্থায় যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কাজ শুরু করা হয়, তাহলে এই নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে- সেই প্রশ্নও সামনে আসছে।
এই প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, এই আলোচনায় নির্বাচন কমিশন কোনো পক্ষ নয়। সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়, সরকার যদি প্রস্তুত থাকে, আমাদের তো করতে কোনো সমস্যা নাই।
গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশনের কাছে আইন ও সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় নির্বাচন কমিশনও এই মুহূর্তে সঠিক কোনো ধারণা দিতে পারছে না কবে তফসিল আর ভোটই বা কত দিনের মধ্যে করতে হবে।
তথ্য সূত্র: বিবিসি বাংলা