Friday, December 5, 2025
Google search engine
Homeজাতীয়লাকসাম-মনোহরগঞ্জের সংযোগ সড়কটি ছোট-বড় খানাখন্দে ভরা চলাচলে জন দুর্ভোগ চরমে

লাকসাম-মনোহরগঞ্জের সংযোগ সড়কটি ছোট-বড় খানাখন্দে ভরা চলাচলে জন দুর্ভোগ চরমে

অনলাইন ডেক্স:
প্রায় দুই বছর ধরে কুমিল্লার লাকসাম থেকে মনোহরগঞ্জ উপজেলা সদরে চলাচলের প্রধান সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। সড়কটি যেন দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গেল বছরের আগস্টের বন্যায় দুই উপজেলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি প্লাবিত হয়েছিলো। বন্যার পানি নামতেই ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির ক্ষত জেগে ওঠে।

স্থানীয়রা বলছেন, দুই বছর ধরে সড়কটি নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ। বিশেষ করে গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বন্যার সময় হাল চাষের ট্রাক্টর দিয়ে মানুষ সড়কটির মনোহরগঞ্জ উপজেলা অংশের ৫ কিলোমিটার চলাচল করে। যার কারণে সেপ্টেম্বরে বন্যার পানি নামতেই ওই ৫ কিলোমিটার এলাকা পুরোপুরি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। হয়ে পড়ে চলাচলের অনুপযোগী। সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন। 

স্থানীয়দের ভাষ্য, বর্তমানে সড়কটির মনোহরগঞ্জ অংশের ৫ কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই ভাঙাচোরা। বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে সড়কটি পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। মনোহরগঞ্জ উপজেলা সদরে চলা চলের প্রধান সড়ক হওয়ায় বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী সড়কটি দিয়ে মানুষকে বাধ্য হয়েই চরম দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। 

মনোহরগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি কার্যলয় সূত্র জানায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির মনোহরগঞ্জ বাজার থেকে আশিরপাড় বাজার পর্যন্ত- প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশে নির্মাণ কাজ গত বছরের জুনে শুরু করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ বছরের জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করার  কথা। কিন্তু কাজ শুরুর পরই আগস্টের বন্যার পর সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে কাজে আরও কিছু অংশ যুক্ত করা হয়। সেটি চূড়ান্তভাবে এলজিইডি প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদন না হয়ে আসায় বর্তমানে সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সড়কটির কাজ শুরু হবে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে সড়কটি। মনোহরগঞ্জ বাজার থেকে লাকসামের দিকে প্রবেশ করতেই ভাঙাচোরা শুরু। আশিরপাড় বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সড়কটির ১০ মিটার জায়গাও ভাঙাচোরা ছাড়া নেই। সড়কের হাটিরপাড়, রশিদপুর, খানাতুয়া, মেরুয়া ও আশিরপাড় অংশে অসংখ্য বড় বড় গর্ত। গত বছর কাজ করার জন্য পুরো সড়কটির পিচঢালাই উপড়ে ফেলায় এমন গর্তের সৃষ্টি হয়ে সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী। তবে শুধুমাত্র মনোহরগঞ্জ উপজেলার অংশই নয়, সড়কের লাকসাম উপজেলার গাজিরপাড়, মিজিয়াপাড়া, গোবিন্দপুরসহ অধিকাংশ জায়গায় বন্যার ক্ষত এখনো দৃশ্যমান।

মনোহরগঞ্জ উপজেলার আশিরপাড় বাজার এলাকায় কথা হয় পাশের মেরুয়া গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি  বলেন, গত প্রায় দুই বছর ধরে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এরই মধ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে আমাদেরকে সড়ক মেরামতের নামে বিপদে ফেলে রাখা হয়েছে। কাজ শুরুর পর সড়কটির দুইপাশে গর্ত করে দুই ফুট বাড়ানো হয়। এছাড়া আর তেমন কোন কাজই করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে সড়কটি দিয়ে চলাচলের কোন জো নেই। 

রশিদপুর এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বন্যায় সড়কটি পানির নিচে ডুবে গেলে বন্ধ হয়ে যায় যাত্রী পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম সিএনজি চালিত অটোরিকশা। তখন বিকল্প হিসেবে প্রায় দেড়মাসব্যাপী বন্যায় এ সড়কে যাত্রী পরিবহনে চলাচল করে পিকআপ ভ্যান ও ট্রাক্টরে চড়ে। এতে তখন সড়কটি মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নির্মান কাজের শুরু থেকেই ধীরগতি হওয়ায় এ সড়কটি দিয়ে মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। 

মনোহরগঞ্জের আশিরপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুন্নবী চৌধুরী ওরফে সেলিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মনোহরগঞ্জ থেকে লাকসাম চলাচল করছি দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে।  দুর্ভোগের অপর নাম সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই সড়কটি বর্তমানে চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বন্যার শুরুতে সড়কটি যখন প্লাবিত ছিলো তখন হাল চাষের ট্রাক্টর ও বড় বড় ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটির অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে পড়েছে। আমরা দ্রুত সমস্যার সমাধান চাই। 

সিএনজি অটোরিকশা চালক হারুনুর রশীদ বলেন, পুরো সড়কটি ছোট-বড় অসংখ্য গর্তে ভরা। একটু বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো পানিতে ভরে যায় এবং পরে কাঁদায় একাকার হয়ে যায়। এসব কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে সড়টিতে। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাতে অনেক কষ্ট হয়। আমরা চাই দ্রুত সড়কটি মেরামত করা হোক। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), মনোহরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, সড়কটির দুইপাশে এক ফুট করে দুই ফুট বাড়ানো হয়েছে। ১৬ ফুট প্রস্থের সড়কটি গত বছর বন্যার কারণে কার্পেটিং ওঠে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার কারণে কাজটিতে বন্যার পরবর্তীতে আরও কিছু অংশ যুক্ত করা হয়েছে। আশা করছি করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজটি শুরু হবে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে মানুষের দুর্ভোগ দূর করার জন্য। 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments