Friday, December 5, 2025
Google search engine
Homeজাতীয়লাকসাম রেলওয়ের সম্পদ লুটপাটে সরকারি আমলা-জবর দখলকারীরা

লাকসাম রেলওয়ের সম্পদ লুটপাটে সরকারি আমলা-জবর দখলকারীরা

মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম, কুমিল্লা:
দেশের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জবর দখল হয়ে যাওয়া কয়েক হাজার জমি উদ্ধারে কারই যেন মাথা ব্যথা নেই। জবর দখল হওয়া ওইসব জমিতে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবনসহ হরেক রকমের স্থায়ী স্থাপনা। এছাড়া ওইসব জমিতে ফ্ল্যাট-বাড়ী, মার্কেট-দোকান বানিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে স্থানীয় ভাবে গড়ে উঠা বেশ ক’টি জমি ব্যবসায়ী নামে ভূমি সিন্ডিকেট। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব দেখার মত কেহই নেই। বিশেষ করে লাকসাম-নোয়াখালি রেল লাইন এলাকায় রেলওয়ের জমি জবর দখলের মহোৎসব চলছে।

সরকারের রাজস্ব বিভাগ, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ সহ অন্যান্য বিভাগ কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা, স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতির কারনে সরকারের কয়েক হাজার একর জমি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা গিলে খাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারের ভ্রান্তনীতি ও ক্ষমতার অবৈধ দখলদারিত্ব যেন রেলওয়ে বিভাগকে স্বেচ্ছাচারিতার জবর দখলে অবাধ ছাড়পত্র দিয়েছে। ওইসব জবরদখলকারীরা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলকে এক অসভ্যতার অন্ধকারে ডুবিয়ে দিচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ের ভূমি দপ্তরে কালো বিড়ালের দৌরাত্ব যেন থামছে না। গত কয়দিন আগে ঐ লাইনের খিলা রেল ষ্টেশান এলাকায় পূর্বাঞ্চলীয় রেল কর্তৃপক্ষ নাটকীয় উচ্ছেদ অভিজান চালিয়ে প্রায় ৩০টি অবৈধ দোকান ভেঙ্গে সরকারি সম্পদ রক্ষা করলেও দুইদিন পর আবার পুনরায় আরসিসি পিলার করে দোকান তোলার খবর পেয়ে লাকসামের একটি সাংবাদিক ট্রিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষনিক রেল পূর্বাঞ্চলীয় কর্তৃপক্ষ, লাকসাম রেল ভুমি অফিস, আরএনবি, জিআরপি সহ একাধিক দপ্তর কর্মকর্তাদের অবহিত করলেও রহস্য জনক কারণে রেলের সম্পদ রক্ষার্থে কেউ এগিয়ে আসেনি।

রেলওয়ে কর্মচারীদের আরেকটি সুত্র জানায়, দেশের পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তর লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকায় কর্মকান্ড চালালেও সরকারী জমি জবর দখল থেকে উদ্ধার করতে এদের কোন তৎপরতা নেই। অথচ এ অঞ্চলে রেলওয়ের বহু খাস জমি, পুকুর, ডোবা, জলাশয় ও কলোনীসহ কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ রয়েছে। আবার অনেকে বিভিন্ন সংগঠনের দোহাই দিয়ে নামে-বেনামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এবং কৃষি কাজের নামে লীজ নিয়ে দালানকোটা, বিপনীবিতান, বাসাবাড়ী ও দোকান পাট নিমার্ণ করে ব্যবসা করছেন। এমনকি কেউ কেউ ভাড়া দিয়ে এবং দখলদার সেজে ওইসব সরকারী জমি বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বিশেষ করে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জবর দখল হওয়া জমিগুলো উদ্ধারে স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বিভিন্ন দলীয় সরকার ক্ষমতা এসে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নানাহ পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন ঘটেনি এবং একে পূঁজি করে সংশ্লিষ্ট কতিপয় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বর্তমানে পকেট বানিজ্য বেড়ে গেছে। জমি দখল হয়ে যাওয়া রেলওয়ের জমি উদ্ধারের জন্য সবগুলো রাজনৈতিক সরকারের আমলে সরকার কিংবা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে নানাহ চাপ সৃষ্টি করেও রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সফল হয়নি। বর্তমানে রেলপথ মন্ত্রনালয় আগের মতই একই পথে হাটতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের যেন কিছূ করার নাই।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভুমি বিভাগের অভ্যন্তরে কেজোনীতি হচ্ছে, মারি আর পারি যে যে কৌশলে। লাকসাম রেলওয়ে ভূমি দপ্তর বর্তমানে মহাদূর্নীতির আখড়াথানায় পরিনত হয়েছে। বৃহত্তর কুমিল্লা, বৃহত্তর নোয়াখালী, বৃহত্তর সিলেট ও বৃহত্তর চট্টগ্রাম নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সদর দপ্তর। ৪টি রেলওয়ে লাইনের আখাউড়া- সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, লাকসাম-নোয়াখালী ও লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইনে দু’পাশে সরকারের কয়েক হাজার একর জমি জবর দখল হয়ে নির্মাণ হয়েছে বহুতল ভবন, বিপনী বিতান, ঘর-বাড়ী ও দোকানপাটসহ কয়েক লাখ হরেকরকম স্থাপনা। রেলওয়ে মন্ত্রনালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারী জমিতে ওইসব স্থাপনা কি ভাবে তৈরী হয়েছে কিংবা বর্তমানেও হচ্ছে এসব প্রশ্নের উত্তর কিন্তু সং¯িøষ্ট রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষের কেহই দিতে পারেনি। রেলওয়ে কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজসে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের আর্শীবাদেই নির্বিঘেœ জবরদখলকৃত রেলওয়ের জমিতে গড়ে উঠছে ওইসব অবৈধ অবকাঠামো। বর্তমান সরকারের রেলওয়ে মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ইতিমধ্যে জবরদখলকৃত রেলওয়ে জমি উদ্ধার করে প্রয়োজনে লীজ সিষ্টেমের আওতা এনে রাজস্ব আয় বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রায় ২৫ হাজার একর জমি রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৬ হাজার একর জমি ব্যাক্তিমালিকানায় জবর দখল হয়ে গেছে। পাশাপাশি ২ হাজার সরকারী ষ্টাফ কোয়াটার, বাসা-বাড়ী এবং প্রায় ৫ শতাধিক পুকুর ও জলাশয় জবর দখল হয়ে ভূমি দস্যুদের মালিকানায় চলে গছে।

রেলওয়ের অপর একটি সূত্র জানায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৩৫ ভাগ সম্পদ জবর দখল হয়ে গেছে। রেলসম্পদ সুষ্ট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার স্বার্থে রেলওয়ের জমিসহ অন্যান্য সম্পদগুলো কি পরিমান রেলওয়ের কাজে ব্যবহার হচ্ছে, কি পরিমান সম্পদ কতজনকে বৈধ ভাবে লীজ দেয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে রেল বিভাগের কি চুক্তি ছিল, চুক্তিঅনুযায়ী তা সঠিক ভাবে পালন করা হয়েছে কিনা এবং কি পরিমান সম্পদ জবরদখল হয়ে আছে তার বিস্তারিত বাৎসরিক একটি হিসাব পত্র প্রকাশ করা উচিত। এছাড়া আগামী কিছুদিনের মধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা এবং রেলওয়ে হেলপ্ লাইন চালু করার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারনে প্রায় ২ বৎসর পার হলেও আলোর মুখ দেখছে না। রেলওয়ের কোন কোন ষ্টাফ কোয়াটারে আগুন কিংবা বড় ধরনের দূর্যোগ দেখা দিলে, দমকল বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থা ঘটনাস্থলে পৌছতে পারলেও পানিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া রেলওয়ের কোন কোন কানুনগো অফিস রেলওয়ের সরকারী জমি-জমা উদ্ধারে অনেক মামলা পরিচালনা করলেও রহস্যজনক কারনে মামলা গুলো দীর্ঘদিন আলোর মুখ দেখছে না। শুধু ভূমি কর্তৃপক্ষের ভূয়া ভাউচার আর মামলার তারিখ একমাত্র পূঁজি হিসাবে কাজ করে চলেছে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল দপ্তর ও রেলওয়ের শাখা ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে স্থানীয় সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তারা বলছেন ভিন্ন কথা, আমরা রাজনৈতিক ভাবে চাপে আছি। সরকার এ অঞ্চলে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয়ের স্বার্থে সরকারী সম্পদ উদ্ধারে বিচার বিভাগীয় কিংবা ট্রান্সফোর্সের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান চালানো একান্ত জরুরী। তবে স্থানীয় রেল সম্পদ জবর দখলকারীরা জানায়, আপনারা সাংবাদিক এ ব্যাপারে লেখালেখি করলে আমাদের কিছুই হবেনা। কারন রেলের নিচ থেকে উপরতলা পর্যন্ত ম্যানেজ করে নিয়েছি।

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments