Friday, December 5, 2025
Google search engine
Homeনির্বাচিত সংবাদ১৬ বছর পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন

১৬ বছর পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন

‘নির্বাচন সামনে রেখে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের এসিড টেস্ট’

১৬ বছর পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২৭ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ ২০০৯ সালে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত নেতৃত্ব পায় জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ জেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক ইউনিটটি। কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলা ও ৪ পৌরসভার সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি গঠিত। দেশের রাজনীতিতে বিএনপির ঘাটি হিসেবে গড়ে ওঠা জেলার উত্তর ও দক্ষিণের উপজেলা গুলোর নেতৃত্ব কাঠামো পরিবর্তন ও শৃঙ্খলা আনতে জেলাটিকে সাংগঠনিক ভাবে দুই ভাগ করে বিএনপি।

রাজনীতি, অর্থনীতি ও ভৌগলিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ এলাকায় বিএনপি সব সময়ই তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে চেয়েছে। তবে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও বাঁধা-বিপত্তির কারনে আওয়ামীলীগের শাসনামলের দীর্ঘ ১৬ বছর দলটি এই ইউনিটের নেতৃত্ব সম্মেলনের মাধ্যমে নির্ধারণ করতে পারেনি। কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত আহ্বায়ক- সদস্য সচিব দিয়েই চলেছে কার্যক্রম। কর্মী বান্ধব মাঠ গোছানো এবং আধিপত্য ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ মাঠের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্বাচিত নেতৃত্ব তুলে আনতে আসন্ন এই সম্মেলন তাই বিএনপির কাছে খুবই গুরুত্ববহ। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনটি কুমিল্লা জেলায় চব্বিশের অভ্যুত্থান পরবর্তি সময়ে বিএনপির ধারক ও বাহক নির্ধারনে এসিড টেস্ট হতে যাচ্ছে বলে জানালেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। তাদের উপরেই নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনসহ রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সফলতা ও বিফলতা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দীর্ঘ বিরতির পর এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আসা কমিটি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সাংগঠনিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বিএনপি’র অন্যতম শক্তিশালী ইউনিট। তবে এই কমিটি ব্যর্থ হলে, রাজনৈতিক কোন্দল ও যোগ্য নেতৃত্বশূন্যতা কিংবা নেতৃত্ব জট আঁকড়ে ধরবে ইউনিটিকে।

সম্মেলন ভবিষ্যত বিএনপি নেতৃত্বের এসিডটেস্ট: 
কুমিল্লার প্রবীন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুক আলতাফ চৌধুরী মনে করেন, দীর্ঘদিন দমন পীড়ন ও বাঁধা-বিপত্তির কারণে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব নির্ধারণ করতে পারে নি। রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও সাংগঠনিক চর্চা থাকলেও তা সম্মেলনে গড়ায় নি। তবে সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে এই ইউনিটটি উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন কমিটি গুলো সম্পন্ন করতে পেরেছে। এবারের সম্মেলনে তারা তৃণমূলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা নেতৃবৃন্দেরর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত কমিটি পেতে যাচ্ছে। আগামীতে এই অঞ্চলে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ধারক-বাহক কারা হবেন তার একটি এসিড টেস্টও হতে যাচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে দক্ষিণের ১০টি উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট। ২০২২ সালের ৩০ মে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে আহ্বায়ক এবং জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়। এ ছাড়া নয়জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে বাকিদের সদস্য করা হয়। ওই কমিটি দীর্ঘ দুই বছর সাত মাস দায়িত্ব পালন করে। সর্বশেষ চলতি বছর ২ জানুয়ারি রাতে ওই কমিটি বিলুপ্ত হয়।

পরে ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ নতুন ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির আংশিক নাম প্রকাশ করে কেন্দ্রিয় বিএনপি। যেখানে আহ্বায়ক করা হয় কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাকারিয়া তাহেরকে (সুমন)। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদকের পদে আছেন। এ ছাড়া সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে। তিনি সর্বশেষ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি ছিলেন।

পরে একই মাসের ২৪ তারিখ ৪১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির নাম প্রকাশ করা হয়। তাদের নেতৃত্বেই শেষ হয় দক্ষিণ জেলার আওতাধীন সকল ইউনিটের সম্মেলন।

১০টি উপজেলার ১০৩ টি ইউনিয়ন ১১৭টি ওয়ার্ড কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করেছেন এবং ৪টি পৌরসভার ৩৬টি ওয়ার্ডের কমিটি করা হয়েছে। দক্ষিণ জেলার অন্তর্গত ডেলিগেট রয়েছে ৭০ হাজারের উপরে। এর মধ্যে কাউন্সিলর রয়েছেন ১৪১৪ জন। তারা কাউন্সিলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে জানা গেছে।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহেরকে (সুমন) বলেন, উপজেলা ও চারটি পৌরসভা আওতাধীন সকল ইউনিটের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আমরা দক্ষিণ জেলা বিএনপির’ সফল সম্মেলনের দ্বারপ্রান্তে। এতগুলো সম্মেলন করে আসতে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে – বিভিন্ন এলাকায় কোন দল নিরসন করতে গিয়ে। এতেও আমরা সফল হয়েছি এবং সবগুলো ইউনিটে সফল সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব পাওয়া গিয়েছে।

সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম বলেন, একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে। এই নেতৃত্ব আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমাদের উপর আস্থা রাখার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহ শিশুর নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

জাতীয় নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ও নেতৃত্ব জট নিরসনের প্রত্যাশা: 
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু বলেন, এই আহবায়ক কমিটির নেতৃত্বে উপজেলা পৌরসভা এবং ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে তৃণমূলে যে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হয়েছে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিকে সবগুলো আসন পুনরুদ্ধারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। আমরা ২৭ তারিখ আমাদের দলনেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যে নির্দেশনা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

সদর উপজেলা বিএনপি’র নবনির্বাচিত সভাপতি রেজাউল কাইয়ুম বলেন, দীর্ঘদিন পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এতে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। আমরা আশা করছি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সমাজের ভালো মানুষেরা নেতৃত্বে আসার সুযোগ পাবে। একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও চান সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে ভালো মানুষেরা বিএনপির নেতৃত্বে আসুক, আমরা সেই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি।

লাকসাম পৌরসভার নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বলেন, নেতৃত্ব জট কাটবে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘদিন বিএনপির নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। বিভিন্ন এলাকায় নেতৃত্ব জট তৈরি হয়, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এই নেতৃত্ব জট খুলবে বলে প্রত্যাশা করছি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments