বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংস্কার প্রস্তাবের আলাপ-আলোচনা যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে, দেশ তত বেশি সংকটে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, যদি সংস্কারের আলোচনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করতে থাকি তাহলে যে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের দল-মত নির্বিশেষে, শ্রেণি-পেশার সব মানুষ এদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে, সেই স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে যাবে। তারা আবার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসবে। তাই যে সব বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ, সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ সংস্কারের কথা বলছেন তারা দয়া করে এ আলাপ দীর্ঘায়িত করবেন না। এতে ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে।
রোববার বিকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, সংস্কারের প্রস্তাবগুলো যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে সব চাইতে আগে নির্বাচনই প্রয়োজন। নির্বাচনের মাধ্যমে যাদেরকে জনগণ দায়িত্ব দেবে তারাই সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারবে। তাদেরকে শুরু করতেই হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সংস্কার বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে। কারণ যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে তারা জনগণের কাছে ওয়াদা করবে যে, তারা সুযোগ পেলে এই সব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, সংস্কারকে যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে, দেশকে-দেশের মানুষকে তত দ্রুত আমরা বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারব। যে সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছে, যে সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কমিশনগুলো তৈরি করে দিয়েছে যেটাই হোক না কেনো, এই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো রাস্তা নাই। একটিই পথ জনগণের নির্বাচন।
তারেক রহমান বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে। কোনো কোনো ব্যক্তি বলেন যে, নির্বাচন হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? আমি বলি, সঙ্গে সঙ্গে সব সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু নির্বাচন হলে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে, জনগণের রায়ের মাধ্যমে যে দল, যে ব্যক্তি বা যারা দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে তখন তাদের মাধ্যমে সমস্যার গিট্টুগুলো আস্তে আস্তে খোলা যাবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আসুন আজকের এই কর্মশালার মাধ্যমে আজকে আমরা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করি যে, বাংলাদেশের মানুষ আমাদেরকে সেই সুযোগ দিলে রাষ্ট্র পরিচালনায় আমরা প্রত্যেকে যে যার অবস্থান থেকে যে সংস্কারের ওয়াদা জনগণের সামনে দিয়েছি তা আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সেই ওয়াদা সর্বোচ্চ পূরণে চেষ্টা করব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে শ্যামপুরের কদমতলীর বালুর মাঠে ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়। এতে মহানগর দক্ষিণের ২৪টি থানার বিএনপিসহ ১১টি অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। রাজধানীর যানজট, পরিবেশ দুষণ, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকজন নেতাকর্মীর প্রশ্নের জবাবও দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, লিটন মাহমুদ, আব্দুস সাত্তার, কে সিকান্দার কাদিরসহ কদমতলী ও ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।