Monday, March 10, 2025
Google search engine
Homeবাণিজ্যযে দামে কেনা তার চেয়ে কম দামে বিক্রি!

যে দামে কেনা তার চেয়ে কম দামে বিক্রি!

রমজান উপলক্ষে খুন্তা ফাউন্ডেশনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের খুন্তা গ্রাম। লাকসাম-মুদাফরগঞ্জ সড়কের পাশে বেশ কিছু দোকান-পাট। ছোটখাটো বাজার। একটু এগিয়ে গেলেই মাদরাসা মাঠ। সেখানে একটি দোকান। সামনে নারী-পুরুষের জটলা। কাছে যেতেই দেখা গেলো, সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য নিত্যপণ্যের বাজার বসিয়েছেন ওই এলাকার কিছু প্রবাসী, চাকুরীজীবী এবং উদ্যেমী যুবক।

‘খুন্তা ফাউন্ডেশন’ নামে তাঁদের একটি সামাজিক সংগঠন রয়েছে। মূলত; ওই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বল্প মূল্যে সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত, দু:স্থ ও সাধারণ মানুষের জন্য নিত্যপণ্যের বাজার বসিয়েছেন তাঁরা। কর্মসূচির নাম ‘পাইকারি যেই দামে কেনা, তার চেয়ে কম দামে বিক্রি’।


বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে খুন্তা ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে আয়োজিত এমন ব্যতিক্রমী কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউছার হামিদ।


দু’দিন পরেই শুরু হবে রমজান মাস। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে” স্বল্প আয়ের মানুষকে সেবা প্রদাণের লক্ষ্যে পাইকারি যে দামে কেনা তার চেয়ে কম দামে বিক্রি” এমন ব্যতিক্রমী কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন খুন্তা ফাউন্ডেশন।


লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউছার হামিদ বলেন, পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে “যে দামে কেনা তার চেয়ে কম দামে বিক্রি” কার্যক্রম সত্িয একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সমাজের বিত্তবান ও মানবিক ব্যক্তিগণ প্রতিটি এলাকায় এমন উদ্যোগ গ্রহণ করলে সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দু:স্থ লোকজন উপকৃত হবে। তাঁদের আর্থিক ব্যয় অনেকাংশে কমবে।


সংগঠনের সদস্য মোহাম্মদ শাহনুর রনি জানান, এই কর্মসূচির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন,ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইতালি প্রবাসী ওমর ফারুক, উপদেষ্টা নাজমুল হক মিঠু, হাজী শাহজাহান, কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান, কার্যকরি সদস্য মো. মাহবুব আলম, জুয়েল হোসেন, রাকিব হাসান, শরীফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার রাজু আহমেদ।
তিনি জানান, কম দামে বিক্রি নিত্যপণ্েযর মধ্েয রয়েছে-এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি ছোলা, এক কেজি খেশারির ডাল, এক কেজি মুড়ি ও এক কেজি চিনি। পাইকারী কেনা দামের চেয়েও কম দামে  এসব পণ্য ৬৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়াও এসব পণ্েযর সঙ্গে রমজানে শরবত পানে তৃষ্ণা মেটাতে এক প্যাকেট ট্যাংক ফ্রি দিচ্ছেন।


সংবাদ পেয়ে মুহূর্তের মধ্যেই সেখানে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। সবাই এসেছেন স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে। এভাবে বাজারের চেয়ে অনেক কম মূল্যে এখানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। যাঁরা এসেছেন, সবাই ফাউন্ডেশনের সদস্যদের সহায়তায় কম মূল্যে নিত্যপণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন। জনতার বাজার থেকে হাসিমুখে বের হয়ে খুশী মনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।


ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম সোহেল জানান,  আমাদের এলাকার লোকজন স্বল্প আয়ের মানুষ। তাঁদের সহায়তা দিতেই আমাদের এই আয়োজন। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে যাওয়ায় আমরা এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।

 
তিনি জানান, শত শত মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ বাজার মূল্যের কম দামে তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পেরে মহা খুশি। যতদিন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজার দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসবে ততো দিন পর্যন্ত আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।


স্বল্প দামে নিত্যপণ্য কিনতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা আনজুমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক। এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি ছোলা, এক কেজি খেশারির ডাল, এক কেজি মুড়ি ও এক কেজি চিনি কিনেছেন  ৬৪০ টাকায়। যা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়েও কম। এ ছাড়াও এসব পণ্েযর সঙ্গে রমজানে শরবত পানে তৃষ্ণা মেটাতে এক প্যাকেট ট্যাংক ফ্রি পেয়েছেন।


ওই এলাকার পঞ্চাশোর্ধ্ব মমিনুল হক জানান, ৬৪০ টাকায় অনেক জিনিস কিনলাম। যাহা বর্তমান বাজার মূল্যের হিসেবে অনেক কম। আমরা চাই, খুন্তা ফাউন্ডেশনের এই কর্মসূচি চলমান থাকুক। এ কার্যক্রম চলমান থাকলে সাধারণ মানুষ অনেক উপকৃত হবেন। এছাড়া এরকম বাজারের পরিধি আরও বাড়লে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ধীরে ধীরে ভেঙে পড়বে।’ 


খুন্তা ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান বলেন, পাইকারি যেই দামে ক্রয়, সেই দামের চেয়ে কম দামে মানুষের হাতে নিত্যপণ্য তুলে দিচ্ছি। মানুষের মুখে হাসি ফুটছে, এতেই আমরা আনন্দিত।


তিনি জানান, গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কারণে শাক-সবজিসহ নিত্যপণ্যের চরম সংকট সৃষ্টি হয়। এ সময় দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক মূল্য বেড়ে যায়। ওই সময় (১ নভেম্বর থেকে চার সপ্তাহ) আমরা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মাত্র ৫৪০ টাকায় শাক-সবজি, তেল, ডাল, পেঁয়াজসহ ৮টি আইটেমের নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দিতে অনুরূপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।


লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউছার হামিদ খুন্তা ফাউন্ডেশনের এমন ব্যতিক্রম ও  মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।


তিনি প্রতিটি এলাকায় এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দু:স্থদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবান ও মানবিক ব্যক্তিবর্গ এবং সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments