Monday, March 10, 2025
Google search engine
Homeসারাদেশযানজটে কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কের চার লেন প্রকল্প এখন বিষফোঁড়া

যানজটে কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কের চার লেন প্রকল্প এখন বিষফোঁড়া

অসহনীয় যানজটের ফলে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের চার লেন এখন যানবাহন ও মানুষ চলাচলে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাকসাম বাইপাস এবং বাগমারা বাজারে চার লেনের কাজ না হওয়ার ফলে দুই লেনের ওই সড়কে তীব্র যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়ছে যানবাহনসহ সাধারণ মানুষ। অসহনীয় ও তীব্র যানজটে নাকাল যানবাহন চালক, যাত্রীসহ পথচারীরাও।

জানা যায়- ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার অংশের কাজ বাকি রেখেই কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত
৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন প্রকল্প সমাপ্ত ঘোষণা করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ সওজ। মূলত এ কারণেই এখন যানজটের চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীসহ সাধারণ মানুষ।

কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের চালক, যাত্রী ও সাধারণ মানুষের কাছে এ চার লেন সড়ক এখন বড় বিষফোঁড়ায় পরিনত হয়েছে। ওই চার লেন প্রকল্পের কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার এলাকা, শানিচৌঁ, কাঁচিকাটা ও লালমাই উপজেলার দক্ষিণ সীমান্ত ফয়েজ গঞ্জ এম, আর ফিলিং স্টেশন থেকে শুরু করে লাকসাম পৌরসভার মিশ্রী, রেলওয়ে জংশন এলাকা, নশরতপুর, চাঁদপুর রেলগেইট, দৌলতগঞ্জ বাইপাস, দক্ষিণ লাকসাম, ধামৈচা এবং লাকসাম উপজেলার উত্তরদা ইউনিয়নের চন্দনা বাজারসহ পুরো এলাকায় ৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার অংশের কাজ এখনো দুই লেনে রয়েছে। ফলে এ দুই লেনের এলাকাগুলোয় যানজটের কবলে পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহন আটকে নাভিশ্বাস যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের। এতে এ আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে চলাচলকারীরা সামান‍্য কিছু এলাকায় চার লেনের সুফল না পেলেও ভোগান্তি পোহাচ্ছে চরমভাবে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ মহাসড়ক হয়ে চলাচলকারী চালক, যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজারের উত্তরে গার্লস হাইস্কুল থেকে শুরু করে বাগমারা বাজারের শেষ দক্ষিণ এলাকা পর্যন্ত এবং লাকসামের জংশন এলাকা থেকে শুরু করে দক্ষিণ বাইপাস পর্যন্ত এলাকাগুলো অতিক্রম করা যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের জন্য বর্তমানে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাগমারা বাজার এলাকা অতিক্রম করা ৫ মিনিটের পথ হলেও অনেক সময় এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে যায় এ এলাকাটি অতিক্রম করতে। একই অবস্থা লাকসাম জংশন, চাঁদপুর রেলগেইট ও বাইপাস এলাকাতেও। ৫ থেকে ১০ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার ও লাকসাম পৌর এলাকার দুই লেনের দুই প্রান্তে চার লেনে গাড়ি চলাচল করলেও বাগমারা বাজার ও লাকসাম পৌর এলাকাটি দুই লেনের হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত এখানে যানজট লেগেই থাকে।

লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজারে প্রায় নিত‍্যদিন চলাচলকারী আলমগীর হোসেন বলেন- কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের বিষফোঁড়া এখন এই বাগমারা বাজার। এখানে সাপ্তাহে দুইদিন হাট বসে এবং সড়কের উপরেই বসে হাট। হাটের দিন ছাড়াও এ বাজারে নিত‍্যদিনই হাট বারের মতো ব‍্যবসা বাণিজ্য চলে। অন‍্যদিকে সড়কের উপর দুই পাশে সারি সারিভাবে দাঁড়িয়ে থাকে সিএনজি, মিশুকসহ ছোট ছোট কিছু যানবাহন। ফলে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাগমারা বাজারে যানজট লেগেই থাকে। আমার প্রায় দিনই বাগমারা বাজারে আসা যাওয়া হয়। এটি এখানে নিত‍্যদিনের চিত্র। তবে যানজট থেকে রেহাই পেতে বাজারের উপর সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার বিকল্প নেই। অতিদ্রুত এ দুই লেনের সড়কটি চার লেন উন্নীত করার দাবী জানান তিনি।


লাকসাম বাইপাস এলাকার বাসিন্দা কাজী মাসউদ আলম বলেন- লাকসাম বাইপাস এলাকায় আসলে মনে হয় এটি ঢাকার মহাখালি, কাঁচপুর বা কুমিল্লার চান্দিনা ও দাউদকান্দির মহা যানজট। দুই লেনের এই সড়কটি অতিক্রম করতে এখন এক ঘন্টারও বেশি সময় লাগে। এটি অতিক্রম করতে সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা নয়। ঢাকা কুমিল্লা নোয়াখালী যাতায়াতকারীদের জন‍্য লাকসাম বাইপাস ও বাগমারা বাজার এখন ভোগান্তির বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও বাইপাস সড়ক অতিক্রম করে দৌলতগঞ্জ বাজারে আসা ক্রেতা বিক্রেতা ও অটো মিশুক যাত্রীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। চার লেনে বাস্তবায়িত এই আঞ্চলিক মহাসড়কটির বাকি অংশ অতিদ্রুত নতুন প্রকল্পের মাধ‍্যমে সমাপ্ত করে সাধারণ মানুষকে যানজটের অসহনীয় ভোগান্তি থেকে রেহাই দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবী জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ১২ অক্টোবর এ এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি যানজটের এ সমস‍্যা দ্রুত সমাধানের জন‍্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগকে নির্দেশ দিলেও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি ও সমস্যা সমাধানে ব‍্যবস্থা নিতে পারেননি।

কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা হয়ে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্য এলাকাগুলোতে জনসাধারণের যাতায়াত সহজকরণ, যানজটের ভোগান্তি দূর, যাতায়াতে সময় কমিয়ে আনা এবং পরিবহন খরচ কমানোর জন্য ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কয়েক দফা সময় বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর প্রকল্পটির কাজ শেষ করে সওজ। তবে ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটির ৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার অংশের কাজ বাকি রেখেই প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।

সূত্রটি আরও জানায়, জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্পের শুরু থেকে ৫৯ কিলোমিটারের মধ্যে কুমিল্লা অংশের লাকসাম পৌর এলাকার দৌলতগঞ্জ এলাকার ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং লালমাই উপজেলার শানিচোঁ এলাকার ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার ও বাগমারা বাজার এলাকার ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার স্থানে প্রকল্পের কাজ আটকে যায়। ফলে শেষ পর্যন্ত ওই ৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার অংশের কাজ বাকি রেখেই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আদনান ইবনে হাসান বলেন- ভূমি অধিগ্রহণ ও নানা জটিলতার কারণে ওই সময় কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কিছু অংশের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। ওইসব জটিলতা নিরসন করে এবং নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের মাধ‍্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূণঃরায় প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা চলছে। নতুন আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাকি অংশে চার লেনের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments