মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনা গোটা মানবতার ওপর ছুরিকাঘাত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন আয়োজিত শিক্ষক প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম কোরবান আলীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করিমের সঞ্চালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াত ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ।
জামায়াতের আমির বলেন, মাগুরায় আট বছরের এক শিশুর সঙ্গে তার আপনজনরা যে আচরণ করেছে, বিশ্বাসে ছুরিকাঘাত করেছে, এটা গোটা মানবতার ওপর আঘাত। এটি হচ্ছে পশুত্বের শিক্ষা। এই শিক্ষা থেকে বের করে এনে আমরা দিতে চাই আল্লাহর দেওয়া মানবিক শিক্ষা। এখানে আমাদের কোনো সংকীর্ণতা নেই। এ ব্যাপারে আমরা ‘ভেরি ডেসপারেট’।
মাগুরার ঘটনাকে ইঙ্গিত করে শফিকুর রহমান বলেন, এই সমাজে পাশবিক হৃদয়বিদারক অনেক দৃশ্য দেখতে হয়, শুনতে হয়। হৃদয় ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায়। তিনি বলেন, যে শিক্ষা নৈতিক শিক্ষা আমরা সেটিকে সমর্থন করব।
৯১ শতাংশ মুসলমানের দেশে শিক্ষা হতে হবে ইসলামি চেতনার শিক্ষা। এটি ছাড়া সমাজ ভালোভাবে চলবে না, যেটি প্রমাণিত। জামায়াত আমির বলেন, আল্লাহ যদি আমাদের কোনোদিন এই দেশ পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়, জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে যদি আমরা ক্ষমতায় যাই, তাহলে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হবে শিক্ষার সংস্কার সাধন করা।
এদিকে রোববার সকালে ফেসবুক পোস্টে জামায়াত আমির বলেন, মাগুরার সেই আট বছরের মেয়েশিশুর ধর্ষক ও ধর্ষণের সহযোগিতাকারীদের অপরাধ এক ও অভিন্ন। এদের সর্বোচ্চ শাসি্ত নিশ্চিত চাই। এ রকম ধর্ষক নামের আরও যত নিকৃষ্ট প্রাণী আছে, যে যেখানেই থাকুক তাদের পাকড়াও করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাসি্ত নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
পোস্টে ধর্ষকদের ঘৃণা ও সামাজিকভাবে বয়কটেরও আহ্বান জানান এই জামায়াত নেতা। তিনি বলেন, ইমাম, খতিব ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বসহ সমাজের সচেতন নাগরিকদের ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে ‘গোলাম পরওয়ার : নারী ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা একটি মারাত্মক জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, অফিস, বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা কোথাও আজ নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নেই। সারা দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তার খণ্ডিতাংশই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বাস্তব অবস্থা আরও ভয়াবহ। ধর্ষকদের ঘৃণা ও সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, গত ৫ মার্চ রাতে মাগুরা সদরে বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে ৮ বছরের এক মেয়েশিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় চিকিত্সাধীন আছে। সে এখন জীবন-মৃতু্যর সন্ধিক্ষণে। এদিকে ৯ মার্চ (রোববার) রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চার মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার নাম করে পানগাঁও ঋষিপাড়া এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ডেকে নিয়ে কয়েকজন কুলাঙ্গার সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। অপর এক ঘটনায় গত ৫ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক ঢাবি শিক্ষার্থীকে ‘ওড়না ঠিক নেই’ বলে নাজেহাল করা হয়। এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয় দেশে নারী ধর্ষণ ও সহিংসতা বেড়ে গেছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দেশবাসীর সঙ্গে সঙ্গে আমরাও গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, মাগুরার ৮ বছরের মেয়েশিশুর ধর্ষক ও ধর্ষণের সহযোগিতাকারীদের অপরাধ এক ও অভিন্ন। এদের সর্বোচ্চ শাসি্ত নিশ্চিত করতে হবে।
অপর এক বিবৃতিতে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গত ৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) রাতে সিলেট সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে শাহেদ নামে এক বাংলাদেশি যুবককে ও ৮ মার্চ (শনিবার) রাতে পঞ্চগড়ের ভিতরগড় সীমান্তে আল-আমিন নামে এক বাংলাদেশি যুবককে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, বিএসএফ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে বাংলাদেশি যুবক আল-আমিনকে গুলি করে হত্যা করেছে এবং গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা সীমান্তে বাংলাদেশি যুবক বিল্লালকে নির্যাতন চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। ২০২৪ সালে বিএসএফ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইস উদ্দীনসহ ১৯ জনকে হত্যা করেছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এসব হত্যাকাণ্ডে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।