বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলামসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী।
১২ মার্চ (বুধবার) কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ওই মামলা দায়ের করেন নাঙ্গলকোট উপজেলার দৌলখাঁড় গ্রামের বেলাল হোসেন। অভিযোগে নাঙ্গলকোট থানার তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলামসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে ওই মামলায়।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী বেলাল হোসেন বলেন- ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে নাঙ্গলকোটের নিজ বাড়ি থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। উপজেলার লুধুয়া এলাকায় নিয়ে নাঙ্গলকোট থানার তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলাম দুইজন পুলিশ সদস্যকে আমার পায়ে গুলি করতে বলেন। ওই পুলিশ সদস্যরা গুলি করতে রাজি না হওয়ায় ওসি নজরুল নিজেই আমার বাম পায়ে গুলি করেন। ওই সময় তিনি আমাকে প্রানে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে আমার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বেলাল হোসেন আরও বলেন- ওসি নজরুল বলে, আমার কাছে নাকি বোমা আছে। বোমা কি জিনিস, আমার জীবনে কখনো দেখিনি। অথচ ওই মামলায় আমাকে এক বছর কারাভোগ করতে হয়েছে। আমাকে গুলি করার পর আমার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে পুলিশের অন্য সদস্যরা আমাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে ঢাকা প্রেরণ করার কথা বললেও ওসি নজরুল আমাকে ঢাকা যেতে দেননি। পরবর্তীতে আমার পা কেটে ফেলতে হয়েছে। ওই ওসি আমাকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দিয়েছে। তবে আমি আজও জানতে পারলাম না, আমার কি অপরাধ ছিল।
বেলাল হোসেনের আইনজীবী বদিউল আলম সুজন এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন- মামলাটি বিজ্ঞ আদালত আমলে নিয়েছেন। বাদী ন্যায় বিচার পাবেন বলে আমি আশাবাদী। বেলাল হোসেনকে ওসি নজরুল নির্মমভাবে গুলি করেছে। তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। নিরীহ বেলাল হোসেন একটি মসজিদে মুয়াজ্জিনের চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জেলে যাওয়ার পর তার পরিবার অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করেছেন। জামিন পেয়েও বেলাল হোসেন আওয়ামী ফ্যাসিষ্টদের ভয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। আজ সময় এসেছে ওই আওয়ামী দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। সেই আলোকে তিনি আজ বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

জানা যায়, বেলাল হোসেন কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার দোলখাঁড় গ্রামের আলী হায়দারের ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন। বেলাল হোসেন ওই সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা চলমান রয়েছে বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি এসব মামলায় জামিনে রয়েছেন।