সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক মহাব্বত আলীর প্রায় ৫০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন, ৮ নং রংছাতি ইউনিয়ন ও ৬ নং খারনই ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় নামে বেনামে মহাব্বত আলী প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার সম্পদ কিনেছে। সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, কলমাকান্দা উপজেলার ৮ নং রংছাতি ইউনিয়নের সিমান্তঘেষা পাতলাবন গ্ৰামের আদিবাসী (ম্রী গারো) সম্প্রদায়ের মানুষ আলিশার মেয়ে রেশমীকে বিয়ে করেছে মহব্বত আলী।
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী রেশমির মা মারা যাওয়ার পর তার পিতা আলিশা ভারতের মেঘালয়ে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করছে। রেশমিরা ১ ভাই ১ বোন নানার বাড়িতে বড় হয়ে হতদরিদ্র রেশমি জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে যায়।
সেখানে পরিচয়সূত্রে মহব্বত আলী তাকে বিয়ে করে(যদিও লাকসামে মহব্বত আলীর মুসলিম স্ত্রী সন্তান রয়েছে)। মহব্বত আলী খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে কিনা, অথবা রেশমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে কিনা, জানা না গেলেও রেশমির নানির বাড়িতে সীমানা প্রাচীর দিয়ে আলিশান ভবন সহ নামে বেনামে শত শত একর সম্পদ কিনে দিয়েছে মহব্বত আলী। পাতলাবন এলাকার মানুষ জানে মহব্বত আলী ঠিকাদার, ধনাঢ্য ব্যক্তি ও ঢাকার বড় ব্যবসায়ী।
কিন্তু এই মহব্বত আলী লাকসামের গুন্ডা, সাবেক স্হানিয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শালা ও স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের একজন তাহা ওই এলাকার মানুষ জানতো না। ৫ আগষ্ট ২০২৪ এর পর ৬ আগষ্টে পাতলাবন এলাকায় স্থানীয়রা মহব্বতের আনাগোনা দেখতে পায়।
বরুয়াকোনা বাজারে নাজমুল হোসেন রনির মালিকানাধীন আয়ান এন্টারপ্রাইজে আড্ডা দিতো মহব্বত আলী। গাড়িযোগে বস্তায় বস্তায় টাকা নিয়ে ওই দোকানে রাখে বলে সুত্র জানিয়েছে।
সূত্রমতে ৮ নং রংছাতি ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক তাজামুল ইসলাম সরকার (ভেন্ডার), বরুয়াকোনা বাজারের আয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক চিকনটুব গ্ৰামের আবুল হোসেন খলিফার ছেলে রনি মিয়া, বটতলা গ্ৰামের আব্দুল মান্নান খানের ছেলে আওয়ামীলীগ নেতা আবু সাঈদ খান, ঢাকাইয়া পাড়ার আলাল উদ্দিনের ছেলে আওয়ামীলীগ নেতা ও চোরাকারবারী আব্দুল হান্নান, চিকনটুব গ্ৰামের তালে হোসেনের ছেলে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রশিদ, হরিনাকুড়ি গ্ৰামের মকবুল হোসেনের ছেলে যুবদলের কর্মী ও তাজামুলের একান্ত সহকারি খোকন মিয়া নামে ব্যক্তিরা কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে মহব্বত আলীকে ভারতে নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। রংছাতি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারণে
সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা খাটাচ্ছে তাজামুল ইসলাম ভেন্ডার।
মহব্বতের সম্পদ ক্রয়, দলিল লেখা, রেজিস্ট্রেশন করা, সব কিছু রক্ষনাবেক্ষন ও তাকে ভারতে পারাপারের কাজে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী এই তাজামুল। ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে তাজামুল ইসলাম মহব্বত থেকে তিন কোটি টাকা এবং বহু সম্পদ তাজামুল নিজের নামে দলিল করে নিয়েছে বলে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।
একসময়ের রেডিও মেইকার পরবর্তীতে দলিল লেখক এই তাজামুল আওয়ামী সরকারের আমলেও সর্বক্ষেত্রে মহব্বতের ক্ষমতা সর্বোচ্চ প্রয়োগ করেছে বলে সুত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী সরকারের শেষ দিকে মহব্বতের ক্ষমতা খাটিয়ে তাজামুল ইসলাম শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
বরুয়াকোনা বাজারের আয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক চিকনটুব গ্ৰামের আবুল হোসেন খলিফার ছেলে রনি মিয়াকে মহব্বতের ম্যানেজার বা ক্যাশিয়ার মনে করে এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ এই রনি মিয়ার দোকানে মহব্বত আড্ডা দিতো। ৭ আগষ্টে প্রাইভেট কারে করে ২ বস্তা টাকা নিয়ে রনি মিয়ার দোকানে রেখেছে মহব্বত আলী। বস্তায় কি যারা জান্তে চেয়েছে তাদেরকে বলেছে ধান।
পরবর্তীতে মানুষের সন্দেহ হলে সহযোগীরা তাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। তাজামুল ও রনি মিয়ার অতিত-বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশি করলে মহব্বতের নগদ টাকা ও সম্পদের খোঁজ পাওয়া যাবে বলে এলাকাবাসীর দাবি।
রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান পাঠান (বাবুল) বলেন, মহাব্বত আলী পাতলাবন এলাকায় গারো মেয়ে বিয়ে করেছে এবং রংছাতি ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় প্রচুর সম্পদ কিনেছে এটি সঠিক।
মহব্বত আলীর একান্ত সহযোগী রংছাতি ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক তাজামুল ইসলাম(ভেন্ডার) বলেন, আমি মহব্বত আলীর প্রায় ৪০/৪৫ কাঠা জমি ক্রয়ের তিনটি দলিল করেছি।
মহব্বত আলীর আরেক সহযোগী নাজমুল হোসেন রনি বলেন, মহাব্বত আলীর শ্বশুরবাড়িতে বিল্ডিংয়ের কাজ আমি করে দিয়েছি। মহাব্বত আলীর সাথে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক। সর্বশেষ ৬ আগষ্ট সকালে ও রাতে তার সাথে দেখা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন নাজমুল হোসেন রনি।