র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এর বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থানে থেকে নিরলস কাজ করে আসছে। সাংগঠনিকভাবে পূর্বের মতো সারাদেশে একযোগে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা সৃষ্টি করার সক্ষমতা না থাকলেও, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। তবে র্যাব-১ কঠোর গোয়েন্দা নজরদারী ও অভিযানের ফলে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতা তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।
র্যাব-১ প্রতিনিয়ত অভিযান ও নজরদারী পরিচালনার মাধ্যমে জঙ্গীবাদ দমনে কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ২ হাজার জঙ্গীকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব-১। যখনই জঙ্গীরা মাথাচাড়া দিয়েছে তখনই র্যাব-১ এর ফোর্সেস সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গীদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১ ও ডিজিএফআই এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর উত্তরা, বনানী, বনশ্রী ও যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর ঢাকা অঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী আবু মাসরুর (৫০)শেখ আশিকুর রহমান আবু আফিফা (৪৯)সাদী মোঃ জূলকার নাইন (৩৫)মোঃ কামরুল হাসান সাব্বির (৪০)মোঃ মাসুম রানা মাসুম বিল্লাহ (২৬) সাঈদ মোঃ রিজভী (৩৫)’কে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ০২টি ল্যাপটপ, ০৬টি মোবাইল ফোন, উগ্রবাদে সহায়ক পুস্তিকা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সংক্রান্ত ডায়রী ও নোট বই।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর সদস্য। তারা আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল কায়েদা মতাদর্শের জঙ্গী সংগঠন ‘আনসার আল ইসলাম’ এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তারা বিভিন্ন সময় অনলাইনে বিভিন্ন উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্য দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে।
২০২২ সালের অক্টোবরে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে বাংলাদেশে এসে সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রম করতে থাকে। পরবর্তীতে সে সংগঠনের ঢাকা অঞ্চলের দাওয়াতী শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি দেশে ও দেশের বাহির থেকে সংগঠনের জন্য চাঁদা সংগ্রহ করতো বলে জানা যায়। তিনি ঢাকা, ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, লক্ষীপুর, ভোলা এবং খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফর, সভায় অংশগ্রহণ এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ ও চাঁদা আদায় করতেন বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত শেখ আশিকুর রহমান আবু আফিফা একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএস সম্পন্ন করে। সে একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকুরীর পাশাপাশি এয়ার কন্ডিশনিং ব্যবসাও করতেন। আশিকুর স্বপরিবারে ইউরোপীয় একটি দেশে বসবাসকালীন মিজবাহের সাথে পরিচয় ও বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি ইউরোপীয় একটি দেশে থাকাকালীন সংগঠনের একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যোগদান করে দাওয়াতী কার্যক্রম করতে থাকে। তিনি সংগঠনটির ঢাকা অঞ্চলের অন্যতম উপদেষ্টা ও অর্থের যোগানদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলো। সে বিভিন্ন সময় উগ্রবাদী ভিডিও কনটেন্ট সংগঠনের সদস্যদের প্রেরণ করতো।
গ্রেফতারকৃত মোঃ মাসুম রানা মাসুম বিল্লাহ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। সে সাদী জূলকার নাইন এর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়। সে তার নিজ এলাকায় দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করছিল বলে জানা যায়। সে সংগঠনে নিয়মিত চাঁদা প্রদান এবং সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের নিকট হতে চাঁদা সংগ্রহ করতো বলে জানা যায়।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।