Saturday, April 27, 2024
Google search engine
Homeনির্বাচিত সংবাদআমরাও আছি দিল্লি­ও আছে, কী বোঝাতে চাইছেন : কাদেরকে ফখরুল

আমরাও আছি দিল্লি­ও আছে, কী বোঝাতে চাইছেন : কাদেরকে ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘দিল্লি আছে, আমরাও আছি; আমরা আছি দিল্লি­ও আছে? কী বোঝাতে চাইছেন? দিল্লি­ কি আপনাদের জানিয়েছে যে, এভাবে অপকর্ম করতে থাকো? দিল্লি কি বলে দিয়েছে, দরকার নাই নির্বাচনের? দিল্লি­ কি বলে দিয়েছে, জোর করেই নির্বাচন করে দাও? তাহলে পরিষ্কার করে বলুন?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এত বেশি পা-চাটা হয়ে গেছে যে, তাদের সাধারণ সম্পাদক বলছেন ভয় নাই, ওরে ভয় নাই। তলে তলে আপস হয়ে গেছে। তাহলে স্বীকার করলেন এত দিনে আপস ছিল না? আসলে আপনাদের মতো এতবড় মিথ্যাবাদী পৃথিবীতে খুঁজে পাবেন না। এর আগে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আলোচনা হয়েছে- আসলে কোনো আলোচনা হয়নি। বলেছে বৈঠক হয়েছে, আসলে কোনো বৈঠকও হয়নি। ছবি তোলার জন্য কত লবিং করেছে সেটা আমরা সবাই জানি।’

বুধবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে পেশাজীবী কনভেনশনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক পেশাজীবী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে এ কনভেনশন হয়। এতে সারা দেশ থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার হাজারো প্রতিনিধি অংশ নেন। 

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘রং হেডেড পারসন’ অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। তাদের কোনো বৈধতা নেই। তাদের যেমন দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না, গণতান্ত্রিক বিশ্বের মানুষও বলে দিয়েছে তোমাদের আমরা আর বিশ্বাস করি না। যেসব দেশ সারা বিশ্বে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে দেখতে চায়, তারা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়নি, ২০১৮ সালেও কোনো নির্বাচন হয়নি। এবারও তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। তাদের অধীনের কোনো নির্বাচনকে কখনো বৈধতা দেওয়া হবে না। 

লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তার কথা এত কুরুচিপূর্ণ যা নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। তবে তিনি তার বক্তব্যে কয়েকটি সত্য কথা বলে দিয়েছেন। তা হলো এ দেশে যা কিছু ঘটে তা শেখ হাসিনার ইঙ্গিতে ঘটে। খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার স্বীকারোক্তিতে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়েছে, এ দেশে বিচার বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই হলো সিদ্ধান্ত। এখন শেখ হাসিনা নিজেকে নিজে সম্রাট ঘোষণা দিলেই পারেন।

তিনি বলেন, ২ বছর ধরে রাস্তায় আন্দোলন করছি। ইতোমধ্যে আমাদের ২২ জনের প্রাণ গেছে। সচেতনভাবে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। তার অর্থ এই নয় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর যদি কেউ আঘাত করে আমরা তার প্রত্যাঘাত করব না। নির্বাচন নির্বাচন করে এবার কোনো লাভ নেই। আগে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। এরপর নির্বাচনের কথা আসবে।

‘গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই, কোনো শর্ত মেনে আমি কোথাও যাব না’ বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের এক বার্তার কথা জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আমাদের অনুপ্রেরণা, বাতিঘর। তিনি ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন, আপস করেননি। তারপরও এখনো গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন। আজকে তিনি মৃত্যুশয্যায়। এ অবস্থায়ও তিনি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো আপস নেই। কোনো শর্তে মেনে নিয়ে আমি কোথাও যাব না। ওয়ান-ইলেভেনের তৎকালীন বেআইনি সরকারের লোকেরা বলেছিল বিদেশে চলে যান। তিনি বলেছেন, এই দেশ ছাড়া কোথাও আমার জায়গা নেই। তখন কিন্তু অন্যরা (শেখ হাসিনা) বিদেশে চলে গিয়েছিলেন।’ 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি (আইনমন্ত্রী) বলেছেন, আমি নাকি ভুল বলেছি, মিথ্যাচার করেছি। অথচ ৪০১ ধারায় পরিষ্কার করে বলা আছে, সরকারের ক্ষমতা আছে শাস্তি মওকুফ করে দেওয়ার, মাফ করে দেওয়ার। তার ক্ষমতা আছে সাময়িকভাবে দণ্ড স্থগিত করে দিয়ে তাকে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার। অথচ বেমালুম বলে যাচ্ছেন, কোনো সুযোগ নেই, তাকে কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এই ধরনের কথাবার্তা বলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তারা হত্যা করতে চায়।’ 

পেশাজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাই আসুন, কালবিলম্ব না করে রাজপথে নামতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে। 

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, আমাকেও জিয়াউর রহমান কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য জামার্নিতে পাঠিয়েছিলেন। সরকারকে বলব, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এ দেশের গতিপথ চোরাবালিতে হারিয়ে গেছে। সেই গতিপথকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তলে তলে আপস হয়ে গেছে। তার মানে কি? স্যাংশন প্রত্যাহার হয়েছে? ভিসানীতি কি প্রত্যাহার করেছে? ওরা জনগণকে বোঝাতে চায় সব কিছু ঠিকঠাক আছে, আসলে তারা ভীত হয়ে পড়েছে। চলমান লড়াইয়ে আমরাই জিতব। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, তলে তলে যে আপস করেছেন, এখন উচিত হবে বাংলাদেশের মানুষকে তা জানানো। না হলে বুঝতে হবে আপনারা আসলে বিদেশিদের সেবাদাসে পরিণত হয়েছেন। 

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের মানুষকে বিপদে ফেলে কোন দিকে পালিয়ে যাবে তার পরিকল্পনা করছে। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। 

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে এবং সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, পেশাজীবী নেতা কামরুল ইসলাম সজল, আব্দুস সালাম ও শামীমুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল হালিম, সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক আবদুল কাইয়ুম, ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ, অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, কবি আবদুল হাই শিকদার, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক গাজী আবদুল হক, একেএম আজিজুল হক, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক হারুন আল রশীদ, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ইউনিভার্সিটি টিচার অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অ্যাডভোকেট কায়সার কামাল, কৃষিবিদ অ্যাসোসিয়েশনের রাশেদুল হাসান হারুন, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, এম আবদুল্লাহ, শহীদুল ইসলাম, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের জাকির হোসেন প্রমুখ। আরও বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ। 

সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায় : পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ফ্যাসিস্ট সরকার খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, সরকার উনাকে হত্যা করতে চায়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চায়।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তাকে পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায়’ এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল আউয়াল মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- ১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কাজী মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, লেবার পার্টির মোহাম্মদ ফারুক, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর, জামায়াতে ইসলামের মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল প্রমুখ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments